সিলেটে হঠাৎ হার্ডলাইনে জেলা প্রশাসন
০৯ মার্চ ২০২৩, ০১:৫৩ অপরাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেট মহানগরের যানজট নিরসনে এবার হার্ডলাইনে জেলা প্রশাসন। সিটি করপোরেশন ও মহানগর পুলিশের সহযোগিতায় গত ৫ ও ৬ মার্চ জেলা প্রশাসন অভিযান চালায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গল ও বুধবার পবিত্র শবে বরাতের কারণে ছাড় দিলেও আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে ফের কঠোরভাবে মাঠে নামছে জেলা প্রশাসন।
গত দুদিন সিলেট সার্কিট হাউসের সামন, কিনব্রিজের নিচ এবং পরে কালিঘাট থেকে শুরু করে সুরমা পয়েন্ট ও কোর্ট পয়েন্ট হয়ে আম্বরখানা পর্যন্ত এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে উচ্ছেদ করা হয় সবধরণের অবৈধ গাড়ি স্ট্যান্ড, খাবারের ভ্রাম্যমাণ ভ্যান গাড়ি ও হকার।
জেলা প্রশাসন বলছে- অভিযানের ফলে মহানগরের ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে কমে আসবে যানজট।
প্রশাসনের এই উদ্যোগে মহানগরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পর্যটন আকর্ষণও বাড়বে বলে মনে করছেন নগরবাসী।
জানা যায়, সিলেট মহানগরকে যানজটমুক্ত করতে গত ২ মার্চ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে যৌথ সভা আহ্বান করা হয়। সিলেট সিটি করপোরেশন, মহানগর পুলিশ, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক এবং প্রশাসন ও বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিদের নিয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিলেট মহানগরকে যানজটমুক্তের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে কালিঘাট থেকে সার্কিট হাউসের সামন পর্যন্ত সুরমা নদীর দক্ষিণ পাড়, সার্কিট হাউস থেকে সুরমা পয়েন্ট, কোর্ট পয়েন্ট, জিন্দাবাজার ও চৌহাট্টা হয়ে আম্বরখানা পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশ থেকে সবধরণের গাড়ির অবৈধ পার্কিং ও হকার উচ্ছেদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
ওই সিদ্ধান্তের পর গত রবিবার (৫ মার্চ) থেকে শুরু হয় যৌথ অভিযান। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে প্রথম দিন সার্কিট হাউস ও আলী আমজদের ঘড়ি ঘরের আশপাশ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানের অবৈধ স্ট্যান্ড স্থাপন করে রাখা হয়েছিল।
এছাড়া নগর পরিবহনের বেশ কিছু বাস রাখা হতো ওই এলাকার রাস্তার পাশে। পাশাপাশি চটপটি ও ফুসকার অর্ধশতাধিক ভ্যান গাড়ি সুরমার পাড়ে সারিবদ্ধভাবে রেখে ব্যবসা করছিলেন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা।
প্রথম দিনের অভিযানে সার্কিট হাউস ও সুরমার পাড় থেকে সবধরনের যানবাহন ও ভ্রাম্যমাণ ভ্যান গাড়ি সরিয়ে দিয়ে রাস্তা ফাঁকা করা হয়। ফলে সিলেট নগর পর্যটনের অন্যতম আকর্ষন সুরমা নদী, আলী আমজদের ঘড়ি, কিনব্রিজ ও সার্কিটহাউস তার নান্দনিক সৌন্দর্য্য প্রকাশের সুযোগ পায়।
পরদিন (সোমবার) সকাল থেকে ফের শুরু হয় কালিঘাট এলাকায় অভিযান। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুল ইসলাম ও নাহিদ নিয়াজ শিশিরের নেতৃত্বে সিলেটের সর্ববৃহৎ পাইকারি আড়ত কালিঘাট এলাকা থেকে ট্রাকের অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে ট্রাক ও পিকআপ চালকরা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনসহ রাস্তার উভয় পাশে এলোমেলো করে ট্রাক রেখে ওই এলাকায় যানজট তৈরি করে রাখতেন। এতে স্কুলগামী ছাত্র ও তাদের অভিভাবকদের মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হতো। সোমবার অভিযানের পর ওই এলাকায় শৃঙ্খলা ফিরে আসে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, আগামী কয়েকদিন সার্কিট হাউস থেকে সুরমা পয়েন্টসহ বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার ও চৌহাট্টা এলাকায় নিয়মিত অভিযান চালানো হবে। অভিযানের পর যাতে ফের রাস্তা ও ফুটপাত দখল না হয়ে যায় সেদিকেও কড়া নজরদারি রাখা হবে।
অভিযান প্রসঙ্গে সিলেট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুল ইসলাম জানান, রাস্তা ও ফুটপাত হকারমুক্ত করা না গেলে যানজট নিরসন সম্ভব নয়। তাই সিলেট নগরীকে যানজটমুক্ত করতে যৌথসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযান শুরু হয়েছে। অভিযানের পর কেউ আবারও রাস্তা কিংবা ফুটপাত দখল করে রাখলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মহানগরের সৌন্দর্য্যবৃদ্ধি ও নগরবাসীর সুবিধার্থে এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। তাই কেবলমাত্র প্রশাসন নয়, বৃহৎ স্বার্থে নগরবাসীরও উচিত এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহায়তা করা।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার