শহরে অভিবাসনের প্রবণতা কমিয়াছে
০৫ জানু ২০২৩, ০৮:০৯ পূর্বাহ্ণ


সম্পাদকীয়:
সংবাদটি মন্দের ভালো, ইতিবাচক। মঙ্গলবার সিরডাপ মিলনায়তনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ-প্রতিষ্ঠান (নিপোর্ট) আয়োজিত সেমিনারে জাতীয় জরিপের ফল জানাইয়া বলা হইয়াছে, গ্রামের মানুষ মহানগরগুলিতে পূর্বের তুলনায় কম অভিবাসিত হইতেছে। আট বৎসর পূর্বে এই ধরনের একটি জরিপ হইয়াছিল। সেই অনুযায়ী দেখা যায়, ছোট শহরে নারী ও পুরুষ আগমনের হার ২০২১ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে বেশি ছিল। অনুষ্ঠানে আলোচকরা ইহার জন্য প্রধানত যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নকেই চিহ্নিত করিয়াছেন। ইহা খানিকটা সত্য বটে।
সারা দেশে জালের মতো রাস্তা বিছাইয়া পড়িয়াছে। যেই স্থান হইতে নৌকায়, পায়ে হাঁটিয়া গঞ্জে আগমন করিতে তিন বা চার ঘণ্টা সময় অতিবাহিত হইত, সেই স্থানে যাইতে এখন হয়তো ২০ মিনিট বা সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট সময় প্রয়োজন হয়। পায়ে হাঁটিবার মেঠোপথ এখন পাকা রাস্তা বা সড়কে পরিণত হইয়াছে। ফলে অনেকেই শহরের প্রয়োজন মিটাইয়া নিজ বাড়িতে ফিরিতে পারিতেছেন; পেশাগত কাজ সারিয়া নিজ গৃহে চলিয়া যাইতেছেন। কিন্তু সড়কই একমাত্র কারণ বলা যাইবে না। ইহার সঙ্গে অরো কিছু অনুষঙ্গ রহিয়াছে। গ্রামেও বিদ্যুৎ পৌঁছাইয়া গিয়াছে, মোবাইল ফোনের অ্যান্ড্রয়েড ভার্শন এমনকি ডিশ বা আকাশসংস্কৃতিও সামান্য কিছু চরাঞ্চল ছাড়া দেশের সর্বত্র পৌঁছাইয়া গিয়াছে। ফলে শহুরে জীবনের প্রতি যে রুপালি কল্পনা ছিল, তাহা খানিকটা কমিয়া থাকিতে পারে। সেই সঙ্গে নিঃসন্দেহে অর্থনৈতিক বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তির ও যোগাযোগের সুবিধা পাইয়া কিছু মানুষ তাহাদের কর্মজীবনও স্থানীয় অঞ্চলে বাঁধিয়াছেন। শিক্ষিত কিছু তরুণ সচেতন হইয়াছেন, যাহারা নিজ এলাকায় খামার, চাষাবাদসহ অন্যান্য ব্যবসায়ে মনোনিবেশ করিয়াছেন।
মানুষ কেন শহরমুখী হয়? ইহার প্রধান কারণ জীবিকা নির্বাহ এবং দ্বিতীয় কারণ জীবন পরিবর্তন। ছোট দেশ, উন্নয়নশীল দেশ। এইখানে মানুষ কর্মের জন্য শহরের দিকে ধাবিত হইবে ইহাই স্বাভাবিক। ইহা ছাড়াও প্রশাসনিক কাজকর্ম মূলত রাজধানীতে কেন্দ্রীভূত। কিন্তু যেই সকল কাজ জেলা পর্যায়ে এবং বিভাগীয় পর্যায়ে সম্পন্ন করা সম্ভব, সেই সকল কাজকর্ম উপজেলা, জেলা ও বিভাগে সম্পন্ন করিবার ব্যবস্থা লওয়া এখন জরুরি হইয়া পড়িয়াছে। দেশে অনেক ধরনের পরিবর্তন সাধিত হইয়াছে। তাই প্রশাসনিক বিন্যাস লইয়াও নূতন করিয়া পরিকল্পনা প্রয়োজন। তাহা হইলে এই শহরমুখী হইবার প্রবণতা আরো কমিয়া আসিবে। সেই সঙ্গে গ্রামাঞ্চলের স্বাস্থ্য সুরক্ষা তথা চিকিত্সাসুবিধা বাড়ানো গেলে শহরমুখী হইবার প্রবণতা নিঃসন্দেহে আরো কমিয়া যাইবে। আমরা লক্ষ্য করিয়া থাকি, বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে মানুষের শহরে অভিবাসিত হইবার প্রবণতা নাই বলিলেই চলে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া তাহারা শহরে থাকিতে চায় না। বরং গ্রামীণ এলাকায় বসবাস অধিক স্বচ্ছন্দময় বলিয়াই মনে করে। অপর দিকে স্থানীয় জনগণের যে কোনো প্রয়োজন স্থানীয় পর্যায়ে মিটিয়া যায় বিধায় তাহারা নিজ এলাকায় থাকিতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করে। তবে উন্নয়নশীল দেশে সেই অবকাঠামো, সেই প্রশাসনিক বিন্যাস এখনো সম্ভব হইয়া উঠে নাই বিধায় বিশেষত এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলিতে রাজধানী ও বাণিজ্যিক বড় শহরগুলি জনসংখ্যার ভারে নুইয়া পড়িতে দেখা যায়। তাহার পরও বলিব, দেশ যতই আগাইবে, ততই মানুষের মধ্যে শহরে ঘনবসতির মধ্যে বসবাসের প্রবণতা কমিবে। একসময় মানুষ অন্তত বাধ্য হইবে না শহরে চলিয়া আসিতে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1.1K বার