এখনো জঙ্গি তামিম এর গ্রামের বাড়ি তালাবদ্ধ
০৮ ফেব্রু ২০২৩, ০৮:২৩ অপরাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার :
আইনশৃংখলা বাহিনীর সাথে গোলাগুলিতে মোস্ট ওয়ান্টেড তামিম আহমদ চৌধুরী সম্প্রতি সময়ে নিহত হয়েছেন। তখন কার সময় তা দুপুরের আগেই জেনে ছিলেন তার গ্রামের বাড়ির লোকজন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে এ খবর পান তারা। তখন কার সময় দ্রুত বাড়িতে থাকা পুরুষ সদস্যরা অন্যত্র চলে যান। বর্তমানে ওই বাড়িতে বেশ কয়েকটি পরিবারের বসবাস হলেও হাতেগোনা দু’-চারজন মহিলা ও পুরুষ ছাড়া আর কেউ নেই। বাড়ির কিছু লোক জন বয়ে বাড়িঘর ছেড়ে সিলেট শহরে বাসা বাড়ি ভাড়া দিয়ে তাকছেন। যে ক’জন মহিলা রয়েছেন, তারাও মুখে যেন কুলুপ এঁেটছেন। সকল প্রশ্নের সহজ উত্তর-‘জানিনা’ বলেই তারা আর কথা বাড়াতে চাননা। এ চিত্র সম্প্রতি সময় আইনশৃংখলা বাহিনীর সাথে গোলাগুলিতে নিহত জঙ্গি তামিম আহমদ চৌধুরীর গ্রামের বাড়ির।
জানা যায়, সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বড়গ্রামের শফিকুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে সোয়া মিয়ার ছেলে তামিম আহমদ চৌধুরী। তার বাবা চট্টগ্রাম শিপইয়ার্ডে চাকরি করতেন। তামিমের শৈশব কেটেছে চট্টগ্রামে। সেখানে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর বাবার সঙ্গে সে কানাডা চলে যায়।
বাড়ির স্বজনরা জানান,-‘কেউ তার মরদেহ গ্রহণ না করায় তার লাশ বেওয়ারিষ হিসেবে ঢাকাতে দাফন করা হয়েছে।
তামিমের চাচা কয়লা ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ‘তাকে ভাতিজা বলতেও ঘৃণা হচ্ছে। ছোটবেলায় তামিম খুব শান্ত স্বভাবের ও মেধাবী ছিল। দেশে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর বিদেশ চলে যায়। কানাডা যাওয়ার পর থেকে ভাই শফিকুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই।’ চাচাতো ভাই ফাহিম আহমদ চৌধুরী বলেন,-‘১৯৯৫ সালের দিকে তামিম একবার দেশে আসে। তখন তার বয়স ১৪-১৫ ছিল। ওই সময় দেখতে পেয়েছি, সে সবার থেকে একটু আলাদা থাকার চেষ্টা করত, শান্ত স্বভাবের ছিল। এরপর থেকে আর কোনো যোগাযোগ নেই।’
গ্রামের বাসিন্দা ঋষি রঞ্জন দাস (৬৫) জানান, তামিমের পিতার সাথে কিশোর বয়সে তার পরিচয় ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তার উপর একটি ফৌজদারী মামলা হলে গ্রেফতার এড়াতে তিনি চট্রগ্রামে আত্মগোপন করেন। পরে সেখান থেকে তিনি কানাডায় পাড়ি জমান।
বছর দুয়েক আগে বড়গ্রামে যাতায়াতের জন্য মাটির রাস্তা তৈরি করা হয়। এর আগে বর্ষায় যোগাযোগের একমাত্র বাহন ছিল নৌকা। গ্রামের বাড়িতে তামিমের দুই চাচা পরিবার নিয়ে থাকেন। তার আপন চাচা নজরুল ইসলাম চৌধুরী মারা যান। তাদের সঙ্গে তামিমের পরিবারের কোনো যোগাযোগ নেই বলে জানান চাচী আঙ্গুরা খাতুন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমার বিয়ের আগে তামিমরা চট্টগ্রামে চলে যায়। সেখান থেকে কানাডা। ২১ বছর আগে তামিম একবার দেশে এসেছিল বলে শুনেছি। এখন তার নাম শুনলে ভয় লাগে।’
গ্রামের মানুষ বলছেন, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় নাম আসার পর তারা প্রথম তামিমকে চিনেছেন। তার কারণে গ্রামের অনেক সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। একই গ্রামের বাসিন্দা বিজয় দাস বলেন,-‘জঙ্গি তামিমের নামের সঙ্গে আমাদের গ্রামের নাম জড়িয়ে গেছে। লোকজন ‘জঙ্গির এলাকা’ও বলছে। এসব শুনলে লজ্জা লাগে।’ একই কথা বলেন গ্রামের দুই কলেজ শিক্ষার্থী জাকারিয়া ও পারভেজ।
তামিমের স্বজনরা জানান, ২০০১ সালে তারা স্বপরিবারে দেশে এলেও গ্রামের বাড়িতে আসেননি। সিলেট নগরীতে বাসা ভাড়া করে তিন মাস থাকার পর আবার কানাডায় ফিরে যান। ব্যক্তিগত জীবনে তামিম বিবাহিত ও তিন সন্তানের জনক। ফেঞ্চুগঞ্জে নানাবাড়ির লোকজনের সঙ্গে তাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তবে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কোন এলাকায় তার নানাবাড়ি সে তথ্য কারও জানা নেই।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার