ফের রাস্তায় আহতরা, সুচিকিৎসায় সময়ক্ষেপণ কাম্য নয়
০৫ ফেব্রু ২০২৫, ০১:৩৬ অপরাহ্ণ
সম্পাদকীয়:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার বহনের ঘোষণা দিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রয়োজনে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্র-জনতার সব বিল সরকার বহন করবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। তাদের খোঁজখবর নিতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় একটি কমিটিও গঠন করে।
কিন্তু ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও হতাহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ কিংবা তাদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনে কার্যকর উদ্যোগের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই শনিবার ফের আহতদের সড়কে নামতে দেখা গেল।
খবরে প্রকাশ, শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতাল ও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে বের হয়ে সড়ক অবরোধ করেন জুলাই বিপ্লবে আহতরা। পরদিন বেলা সাড়ে ১১টায় তারা শ্যামলীর শিশুমেলা মোড়ে ফের অবস্থান নিলে ওই এলাকায় যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। তাদের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের পুনর্বাসন, সুচিকিৎসা, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, হতাহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ ও আহতদের ক্যাটাগরি বাদ দিতে হবে।
বিকালে আহতদের কল্যাণে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি অধিদপ্তর করা হবে-সরকারের পক্ষ থেকে এমন আশ্বাস আসে। এ কারণে আহতদের একাংশ সড়ক ছেড়ে গেলেও অন্যপক্ষ দাবিতে অনড় থাকে। তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাওয়ের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। রাত পৌনে ৯টার দিকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পাশের সড়কে গেলে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা। পরে সেখানেই অবস্থান নেন তারা। উল্লেখ্য, একই দাবিতে গত বছরের ১৪ নভেম্বর পঙ্গু হাসপাতালের সামনে এবং চলতি বছরের ২ জানুয়ারি শাহবাগে সড়কে বিক্ষোভ করেন আহতরা। তখনো সমস্যা সমাধানের আশ্বাস পেয়ে ফিরে গিয়েছিলেন তারা। দুঃখজনক হলেও সত্য, সুচিকিৎসায় ব্যত্যয় ঘটার কারণেই ফের তাদের সড়কে নামতে হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই দেশ এক নতুন দিনের স্বপ্ন দেখতে পারছে, সেই সাহসী বীরদের প্রতি অবহেলা মেনে নেওয়া যায় না।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লবে আহতদের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ১২ হাজার ৯৮১ জনের তালিকা হয়েছে। তবে তালিকাভুক্তদের মধ্যে এখনো ১ হাজার ২৩৮ জনের ক্যাটাগরি নির্ধারণ করা যায়নি। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, চিকিৎসার ক্ষেত্রে এমন দীর্ঘসূত্রতা কাঙ্ক্ষিত নয়। আহত শরীর নিয়ে যারা সুচিকিৎসার আশায় দিনাতিপাত করছেন, শুধু তারাই জানেন এ প্রহর কত যন্ত্রণার! বিগত সরকারের দুঃশাসনের অবসানের পর পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে, এমন আশা করা তাদের জন্য ন্যায্যও বটে। দেশের প্রয়োজনে যারা জীবন বাজি রেখেছেন, দীর্ঘসূত্রতাকে তারা অবহেলা ভেবে যদি সড়ককে বেছে নেন, তাহলে এ লজ্জা আমাদের সবার। আবার এটাও সত্য, দাবি আদায়ে সড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচিতে জনগণকে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। আমরা মনে করি, ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায়ের মাধ্যম হিসাবে আলোচনাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এতে অন্তত জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ছন্দপতন ঘটে না। সময়ক্ষেপণ না করে সরকার আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 987 বার