সিলেটের হোটেলগুলোতে এসব কী হচ্ছে?
২৩ জানু ২০২৫, ০৩:১৩ অপরাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেট, আধ্যাত্মিকতার শহর, পর্যটন নগরী। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে কিংবা পবিত্র মাজারগুলো দেখে আধ্যাত্মিক শান্তি খুঁজে নিতে। প্রতিদিন হাজারো পর্যটক আসেন দর্শনীয় স্থানগুলোতে। তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসায় উঠেন হোটেলে।কিন্তু এই হোটেলগুলোতে চলছে অসামাজিক কর্মকাণ্ড। যা শুধু পর্যটন খাতের সুনামকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, বরং সিলেটের আধ্যাত্মিক ও সামাজিক অবস্থারও অবনতি ঘটাচ্ছে।
আধ্যাত্মিকতার শহর হিসেবে পরিচিত সিলেটে সামাজিক অবক্ষয়ের এমন চিত্র শঙ্কার জন্ম দিচ্ছে সিলেটবাসী এবং পর্যটকদের কাছে। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তাছাড়া এসব কর্মকান্ডের ফলে হোটেল শিল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আগ্রহ হারাবেন দেশি-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা।
অভিযোগ উঠেছে সিলেটের আবাসিক হোটেলগুলোতে চলছে দেহ ব্যবসা, মাদক আর তরুণ-তরুণীদের আড্ডা। মাত্র ১ দিনে সিলেটের বিভিন্ন হোটেল থেকে ১৩ নারী-পুরুষকে আটক করা হয়েছে। যার মধ্যে হোটেলের স্টাফও রয়েছেন।
সূত্র জানায়, সিলেট নগরীর বন্দরবাজার, দরগাহ গেইট, তালতলা, কদমতলী, সোবহানীঘাট ও রেলস্টেশন এলাকায় সিলেটের বেশিরভাগ হোটেলের অবস্থান। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি হোটেলে চলে অসামাজিক কার্যকলাপ। চলে মাদক সেবনও। পাশাপাশি প্রেমিক যুগলকে কোন প্রকার নীতিমালা না মেনেই কক্ষ ভাড়া দেয়া হয়। যাচাই বাছাই ছাড়া কেবল টাকার লোভে এসব হোটেলে তাদেরকে সুযোগ করে দেয়া হয় অসামাজিক কাজের। ফলে বিপদগামী হচ্ছে সিলেটের যুব সমাজ।
নিয়মানুযায়ী স্বামী-স্ত্রী হোটেলে কক্ষ ভাড়া নিতে হলে তাদের ছবি, এনআইডি কার্ড ক্ষেত্র বিশেষে কাবিন নামার কপি নিয়ে তারপর এন্ট্রি দেয়ার কথা। কিন্তু এসব নীতিমালার তোয়াক্কা না করে তাদেরকে কক্ষ ভাড়া দিচ্ছে হোটেলগুলো। বিনিময়ে আদায় করছে মোটা অংকের টাকা।
জানা যায়, সিলেট নগরীতে একদিনে পৃথক অভিযান চালিয়ে অসামাজিক কাজের অভিযোগে ১৩ নারী পুরুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরমধ্যে নগরীর রাজারগলি এলাকার হোটেল নিউ জালালী আবাসিক হোটেল থেকে ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, গোয়াইনঘাট থানার পাইকরাজ গ্রামের আব্দুল মালিকের ছেলে সালেহ আহমদ ও নাসিমা। আম্বরখানা এলাকার হোটেল নুরানী ও হোটেল আলীবাবা থেকে অসামাজিক কাজের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় ৪ জনকে। তারা হলো, সাহেবের বাজারের পীরেরগাঁও গ্রামের আব্দুল খালিকের ছেলে মো. ফয়ছল আহমদ, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থানার কুসারায় গ্রামের কাপ্তান মিয়ার ছেলে ওয়াহিদুল হাসান, তাহিরপুর থানার শারপীন টিলা এলাকার আব্দুল করিমের মেয়ে শাপলা বেগম ও কুমিল্লার বড়–য়া থানার লগ্নসার গ্রামের আবিদ আলীর ছেলে মোছা. শাহীনা আক্তার সীমা। দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশিদ চত্বরস্থ ঢাকা প্যালেস নামক আবাসিক হোটেল থেকে স্টাফসহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলো, সিলেটের শাহপরান থানার দত্তগ্রামের সেলিম আহমদের ছেলে জিবান আহমদ, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের আজর আলীর ছেলৈ রুহুল আমিন, সিলেটের গোলাপগঞ্জের বাঘরখলা গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে শফিকুল ইসলাম পাপ্পু, ঢাকা প্যালেসের স্টাফ ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার আখাউড়া থানার টানপাড়া গ্রামের সুরুজ মিয়ার ছেলে স্বপন মিয়া, সিলেটের শাহপরাণ থানার বেলগ্রামের ইমন চৌধুরীর মেয়ে এনি বেগম, বালাগঞ্জের মাইশাসি গ্রামের মিজানুর রহমানের মেয়ে মেহের জাবিন নামিয়া, শাহপরাণ থানার মুরাদপুর গ্রামের সাহাব উদ্দিনের মেয়ে নিপা আক্তার তানিয়া।
হোটেলে এসব অসমাজিক কার্যকলাপের ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী সিলেটভিউ এর সাথে আলাপকালে বলেন, সিলেটের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সামাজিক অবক্ষয় ঘটছে। এর পেছনে এসব হোটেলে দেহ ব্যবসা বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তিনি পুলিশের এই অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, এভাবে অভিযান চালানো হলে এই অপকর্ম থেকে রেহাই মিলবে।
তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে প্রবাসী বা দেশের বিনিয়োগকারীরা পর্যটন কেন্দ্র সিলেটের হোটেলে বিনিয়োগ করতে চাইবেন না। এতে পর্যটন খাতে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখিন হবে সিলেট। তিনি বলেন, হোটেলগুলোর উচিত এনআইডি কার্ড যাচাই করে কক্ষ ভাড়া দেয়া। পাশাপাশি প্রশাসনের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, পুলিশ সব সময় এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে কাজ করছে। পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 987 বার