৩৬৬ জনের ব্যাংক হিসাবে জব্দ ১৫ হাজার কোটি টাকা
১৫ জানু ২০২৫, ১২:১৪ অপরাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার:
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ৮ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন শতাধিক সাবেক মন্ত্রী, এমপি, বিতর্কিত ব্যবসায়ী, গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে রাষ্ট্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। সন্দেহজনক লেনদেন, অর্থপাচার, অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা এসব ব্যক্তিদের হিসাবে ১৫ হাজার কোটি টাকা রয়েছে।
সূত্র জানায়, জব্দ করা হিসাবের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ (জয়) ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল) এবং শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকির (ববি) অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এছাড়া আছে এস আলম, সামিট, বেক্সিমকো গ্রুপ, বসুন্ধরা, ওরিয়ন, নাসা, জেমকন, নাবিল গ্রুপ এবং সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদসহ সাবেক সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব রয়েছে। হিসাবগুলো দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) নির্দেশে এখন জব্দ রয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে টানা ১৬ বছরের আওয়ামী লীগের নজিরবিহীন দুঃশাসন ও স্বেচ্ছাচারিতার অবসান ঘটে। সরকার পতনের পর তার আমলের মন্ত্রী,এমপি, সহযোগীসহ গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিদের দুর্নীতি, অর্থপাচার ও ঋণ কেলেঙ্কারির খবর বেড়িয়ে আসছে। হাসিনা পালানোর সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তিরাও গা ঢাকা দেন। অনেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আটক ও গ্রেপ্তার হন। এমন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ। একইসঙ্গে তাদের স্ত্রী, সন্তানসহ ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়। এখন এসব ব্যাংক হিসাবের চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে আর্থিক খাতের এই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
বিএফআইইউ-র একাধিক কর্মকর্তা জানান, অর্থপাচার রোধ ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আপোষহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রথমত পাচারের সঠিক তথ্য উদ্ধার, পরিমাণ নির্ণয় ও পরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দিকে আগানো হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যদি কোনো প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গ্রুপের বিরুদ্ধে পাচারের তথ্য প্রমাণিত হয় তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। কিন্তু তাদের ব্যবসায় ক্ষত সৃষ্টি হতে দেওয়া হবে না। অতীতে বাংলাদেশে অনেক ব্যবসার মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা নেওয়া।
বিএফআইইউর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর সন্দেহজনক লেনদেন ও বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে দেড় হাজারের বেশি ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করছে বিএফআইইউ। তবে ৮ আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিএফআইইউ, এনবিআর এবং দুদক যৌথ প্রচেষ্টায় ৩৬৬ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে। তাদের অ্যাকাউন্টে ১৫ হাজার কোটি টাকা পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত ১১২টি মামলার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির খসড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ শাসন আমলে বাংলাদেশ থেকে ২৮ উপায়ে দুর্নীতির মাধ্যমে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ সাড়ে ২৮ লাখ কোটি টাকা।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য আন্ত:সংস্থা টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করেছে সরকার। এ টাস্কফোর্সের সভাপতি করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে। টাস্কফোর্সের কার্যপরিধি মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ বা সম্পদ চিহ্নিত করা; পাচার করা সম্পদ উদ্ধারে হওয়া মামলাগুলোর কার্যক্রম দ্রুত নিষ্পত্তি করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করা ও তা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া; বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া; জব্দ বা উদ্ধার সম্পদের ব্যবস্থাপনার জন্য উদ্যোগ নেওয়া; এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশ, বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ ও তথ্য আহরণ করা এবং পাচার করা সম্পদ উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ সমন্বয় সাধন।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 988 বার