সিলেট থেকে যে কারণে পণ্য রপ্তানি হচ্ছে না লন্ডনে
১৮ ডিসে ২০২৪, ১২:৩০ অপরাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেট থেকে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে পণ্য রপ্তানির অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে এই অঞ্চলে উৎপাদিত সাইট্রাস জাতীয় ফল, সবজি ও বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্যের বাজার রয়েছে বহির্বিশ্বে।
সিলেটের প্রবাসীরাই হচ্ছেন এসব পণ্যের মূল ক্রেতা। রপ্তানির এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে অত্যাধুনিক কার্গো কমপ্লেক্স। কিন্তু ‘প্যাকিং হাউস’ না থাকায় সিলেট থেকে কোনো ধরনের কৃষিপণ্য রপ্তানি সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কোনো কাজেই আসছে না ১০০ টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই কমপ্লেক্স। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাত্র ২-৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নারায়ণগঞ্জের শ্যামপুরের আদলে ‘প্যাকিং হাউস’ স্থাপন করা গেলে সিলেট থেকে প্রচুর পরিমাণ কৃষি ও কুঠিরশিল্প পণ্য রপ্তানি সম্ভব।
ব্যবসায়ীরা জানান, সিলেটে উৎপাদিত ‘গোয়ালগাদ্দা শিম’, নাগা মরিচ, খাসিয়া পান, তইকর, ফরাশ ও শিমের বিচি, ঢাকাদক্ষিণের কচুমুখী ও লতি এবং সাইট্রাস ফল হিসেবে পরিচিত জারা লেবু, আদা লেবু ও সাতকরার প্রচুর চাহিদা রয়েছে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। বিশেষ করে যেসব দেশে সিলেটী প্রবাসীরা আছেন তাদের কাছে এসব পণ্যের কদর বেশি। সিলেটি অধ্যুষিত এলাকার সুপারশপেও এসব পণ্যের ব্যবসা ভালো। সিলেট থেকে রপ্তানির সুযোগ না থাকায় বর্তমানে ব্যবসায়ীরা ঢাকা থেকে এসব পণ্য রপ্তানি করছেন।
সিলেটবাসীর দাবির মুখে ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু হয়েছে। এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে বিদেশে পণ্য রপ্তানির জন্য ব্যবসায়ীরা ওসমানী বিমানবন্দরে কার্গো কমপ্লেক্স ও প্যাকিং হাউস নির্মাণের দাবি জানান। সিলেট থেকে রপ্তানির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ২০২০ সালে ওসমানী বিমানবন্দরে শুরু হয় ‘এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স’ নির্মাণকাজ। প্রায় ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২২ সালে কমপ্লেক্সটির কাজ শেষ হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওসমানী বিমানবন্দরের কার্গো কমপ্লেক্সটি ঢাকার চেয়ে অত্যাধুনিক। ১০০ টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন কমপ্লেক্সটির সিকিউরিটি ব্যবস্থা খুবই উন্নতমানের। কার্গো কমপ্লেক্সে বসানো হয়েছে আধুনিক এক্সক্লুসিভ ডেডিকেশন সিস্টেম (ইডিএস) স্ক্যানার মেশিন। সিলেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, কার্গো টার্মিনাল ও কমপ্লেক্স তৈরি হওয়ায় সিলেট থেকে পণ্য রপ্তানির নতুন দুয়ার উন্মোচন হয়েছে। বর্তমানে ব্যবসায়ীরা ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সিলেটে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করতে হচ্ছে। সিলেটে একটি প্যাকিং হাউস করা গেলে ব্যবসায়ীদের আর ঢাকা ও চট্টগ্রামে দৌড়াতে হবে না। সিলেট থেকেই কৃষিপণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হবে। এতে স্থানীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন ও মান বৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।
রপ্তানি সম্ভাবনা সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করতে সিলেটে এসেছিলেন বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরিন জাহান। গত ৩ ডিসেম্বর তিনি সার্কিট হাউসে ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি সিলেটে প্যাকিং হাউস স্থাপনের মাধ্যমে রপ্তানি চালুর আশ্বাস দেন।
এ প্রসঙ্গে জালালাবাদ ভেজিটেবল অ্যান্ড ফ্রোজেন ফিশ এক্সপোর্ট গ্রুপের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কৃষিপণ্য রপ্তানি করতে হলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে মাননিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্যাকিং করতে হয়। এর পর প্যাকিংকৃত মাল নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ‘কুলিং হাউসে’ রাখতে হয়। পরে এসব পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হয়। বর্তমানে কৃষিপণ্য রপ্তানি করতে হলে নারায়ণগঞ্জের শ্যামপুরের প্যাকিং হাউসের দ্বারস্ত হতে হয় ব্যবসায়ীদের। এতে সময় ও খরচ বেড়ে যায়। সিলেটে প্যাকিং হাউস হলে এখানকার উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষিপণ্য রপ্তানি সম্ভব। বিদেশে সিলেটের বিভিন্ন কৃষিজ পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আর প্যাকিং হাউস স্থাপন করা না গেলে ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কার্গো কমপ্লেক্সটিও কোনো কাজে আসবে না।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 988 বার