“১৬ বছরে ফ্যাসিবাদের অগ্নিকুন্ড ২০২৪ সালের ৫ই আগষ্ট বিস্ফুরিত”

Daily Ajker Sylhet

দৈনিক আজকের সিলেট

০৫ অক্টো ২০২৪, ০৬:৩০ অপরাহ্ণ


“১৬ বছরে ফ্যাসিবাদের অগ্নিকুন্ড ২০২৪ সালের ৫ই আগষ্ট বিস্ফুরিত”

এডভোকেট: মো: আমান উদ্দিন:
১৯৭১ সালে পূর্বপাকিস্তানি জনগন বৈষম্যের শিকার হয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠি দ্বারা ২৩ টি বছর। শেখ মুজিবুর রহমানকে নেতা স্বীকার করে বৈষম্যের বিরুদ্ধে পূর্বপাকিস্তানি জনগন একতাবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছিল। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান সেইসব শহীদদের সম্মান রক্ষা করতে পারেননি। লোভ লালসা তাহাকে গ্রাস করে ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে রাজতন্ত্র বা পরিবারতন্ত্র কায়েম করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই উচ্ছাকাংখা তাহাকে নির্বংশে পরিনত করেছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগষ্ট। বংশের শেষ রতœ শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেখিয়ে দিয়েছেন শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল যদি তিনি বেঁচে থাকতেন তাহলে শেখ হাসিনার চেয়ে ভয়ংকর হত। ক্ষমতার মোহ যদি ১৯৭১ সালে ত্যাগ করে দলীয় শীর্ষস্থানীয় কোন নেতাকে সরকার গঠনের সুযোগ দিতেন, তাহলে শেখ মুজিবুর রহমান দক্ষিন আফ্রিকার “নেলসন ম্যান্ডেলার” মত জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করিত। বৈষম্য বিরুধী ছাত্র-আন্দেলনের নেতৃবৃন্দকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনার শাসনামলকে আখ্যায়িত করেছিলেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক জনাব মাহমুদুর রহমান। আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে রক্তাক্ত হয়েছেন মজলুম এই সাংবাদিক। মিথ্যা মামলায় বছরের পর বছর কারারুদ্ধ থেকেছেন কিন্তু ফ্যাসিষ্ট খুনি হাসিনার ক্যাংগারো আদালতে জামিন চাইবেন না মর্মে শপথ করেছিলেন। শপথ রক্ষা করেছেন। সত্য সাংবাদিকতা করতে গিয়ে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত ও ফ্যাসিষ্ট হাসিনার রোষানাল থেকে বাঁচতে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়ে জাতিকে জাগ্রত ও সচেতন করতে যেসব বরেন্য সাংবাদিক ভূমিকা রেখেছেন তাহাদের মধ্যে অন্যতম:ড: শফিক রেহমান, ড: মাহমুদ রহমান, ড: জিল্লুর রহমান, ড: পিনাকী ভট্টাচার্য্য, ড: কনক সরওয়ার, ড: মুশফিকুল ফজল আনসারী, ইলিয়াস আলী, মস্তফা ফিরোজ, শাহেদ আহমদ সহ অগনিত প্রবাসী সাংবাদিক। নিপীড়িত জনতার পক্ষে কথা বলতে যেসব নেতাকর্মী গুম, খুন, অপহরন, ক্রসফায়ারের সম্মুখীন হয়েছেন, তাহাদের মধ্যে তরুন প্রজন্মের অহংকার সাবেক সংসদ সদস্য এম. ইলিয়াছ আলীর মত শতশত প্রতিভাবান নেতা গুমের শিকার হয়েছেন। ইলিয়াছ আলী গুমের পর অন্তত ৩০/৩৫ জন আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে মৃত্যুবরন করেছেন। বি.ডি.আর হত্যাকান্ডে সুপরিকল্পিতভাবে চৌকস ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হইয়াছে। বিচারের নামে পাতানো আদালতে নিরীহদের সাজা হচ্ছে। তাহাদের পরিবার অবর্ননীয় দুঃখ দুর্দশায় দিন যাপন করিতেছেন। অথচ হত্যার মহানায়ক শেখ হাসিনা ধরাছোয়ার বাহিরে। ভুক্তভোগী ৫৭ জনের পরিবারের সকল সদস্যই জানেন এই হত্যাকান্ডের মাষ্টারমাইন্ড শেখ হাসিনা। কথিত আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালে বিচারের নামে যে প্রহসন হয়েছে দেশপ্রেমীকে ১৮ কোটি মানুষ জানে। এই বিচারকে পরিকল্পিত আনুষ্টানিক হত্যাকান্ড হিসাবে আখ্যায়িত করছেন রাজনৈতিক সচেতন বোদ্ধরা। এই হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন, শহীদ মৌলানা মো: মতিউর রহমান নিজামী, শহীদ আলী আহসান মো: মোজাহিদ, শহীদ কাশেম আলী, শহীদ কাদের মোল্লা, শহীদ কামরুজ্জামান, শহীদ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। মৌলানা দেলওয়ার হোসেন সাঈদীকে ক্যাংগারো আদালত হত্যার আদেশ দিলেও প্রায় শতাধিক মানুষ আন্দোলন সংগ্রামে নিহত হওয়ার পর সরকার বাধ্য হয়ে রায় পরিবর্তন করে আমৃত্যু সাজা প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বি.এন.পি) এর মহাসচিব, স্বজ্জন ব্যক্তিত্ব জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড: শফিকুর রহমান সহ দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বছরের পর বছর জেল খেটেছেন সাধারন জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সাধারন নেতাকর্মীরা কারারুদ্ধ ছিলেন। প্রায় ৮৬ হাজার মামলায় লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী আসামী। গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে নেতাকর্মীরা বাড়ি ছাড়া। প্রান দিয়েছেন অগনিত নেতাকর্মী। ১৬ বছর থেকে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন শহীদ রাষ্টপতি জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসুরী নেতা কর্মীদের আস্থার ঠিকানা জনাব তারেক রহমান। গনতন্ত্রের ‘মা’ আপোষহীন নেত্রী শত প্রতিকুলতা ও অসুস্থতার মধ্যে সরকারের সাথে সমঝোতা না করে নেতাকর্মীদের দিক নির্দেশনা দিয়ে উজ্জিবিত রাখার নাম বেগম জিয়া। আন্দোলন সংগ্রামের রসদ যোগিয়েছেন ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা। যেমন: ২০১৪ সালে ইলেকশনের নামে সিলেকশন, ২০১৮ সালের দিনের ভোট রাতে, ২০২৪ সালে আমি ডামির নির্বাচন। ২০২৪ সালে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে রাজাকারের নাতি-পতিœরা—। কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০১৮ কে কটাক্ষ্য করে পার্লামেন্টে শপথ ভংগ করে কোটা প্রথা তুলে দেন। আবার কৌশলে কাংগারো আদালতকে ব্যবহার করে কোটা পদ্ধতি পুনঃবহালের চেষ্টা করিলে ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মী যাহাদের জন্ম ২০০০ সালের পর। তাহারা জেগে উঠল। সুরা “ফীল” এর ভাষায় ফ্যাসিষ্ট হাসিনাকে অপসারিত করতে বা শয়তানকে পরাজিত করতে এসব আবাবিলদের উত্থান হয়েছে। তাহারা সফল ও হয়েছে। তাহাদের সফলতার পিছনে ছিল সুদুর পরিকল্পিত রাজনৈতিক নেতৃত্ব। যুগে যুগে অন্যায় অত্যাচার যেখানেই বিস্তার লাভ করিবে সেখানেই আবাবিলরা জেগে উঠবে। আবাবিল বা নিষ্পাপদের দ্বারা অর্জিত স্বাধীনতা সাধারন জনগনের ম্যাগনা কার্টা হিসাবে স্মৃতির জাদুঘরে রাখা সম্মানজনক। তাহাদের পক্ষে আসিফ, নাহিদ, মাহফুজ অন্তবর্তী সরকারে যাওয়া ঠিক হয়নি। রাষ্ট্রের কাঠামো ঠিক করবেন রাজনীতিবিদরা। ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনার সাথে গনতন্ত্রের ‘মা’ বেগম খালেদা জিয়া বা ডা: শফিকুর রহমানের তুলনা অলীক ও অমুলক। রাজনৈতিক নেতৃত্ব যে সিদ্ধান্ত নিবেন তাহা বাস্তবায়নের জন্য অজ¯্র্র নেতাকর্মী মাঠ পর্যায়ে আছেন যাহা অন্তবর্তী সরকারের নেই। ব্যর্থতা দ্বারপ্রান্তে। অজ¯্র প্রানের বিনিময়ে ফ্যাসিষ্ট হাসিনাকে সরানো হয়েছে। দ্রæত নির্বাচন দিয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দেশ এবং জাতিকে বাঁচান। আপনারাসহ আবাবিলদের বাঁচান। যে কোন অপশক্তি আসতেই পারে। ক্ষতি বেশী আবাবিলদেরই হবে। আবাবিলদের উদ্দেশ্যে বলি, বয়স কম, কাহারও প্ররোচনায় বাড়াবাড়ি না করাই উত্তম। উপরোক্ত বর্ণনা থেকে বলুন “দেশে অগ্নিকুন্ড শেখ হাসিনা তৈরী করেছে, সেখানে শুধু দিয়াশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়েছেন আবাবিলরা। ১৯৭১ সালে ৪ জন ছাত্র নেতা উপাধি পেয়েছিলেন নিউক্লিয়াস বা খলিফা। তাহাদের মধ্যে আ.স.ম. রব, আব্দুল কুদ্দুছ মাখন, শাহজাহান সিরাজ, নুরে আলম সিদ্দিকী। এসব ছাত্র নেতাদের কথায় তখন পূর্ব পাকিস্তানি জনগন পরিচালিত হত। আজ তাহারা সকলেই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত। তাহাদের কে কয়জনই বা চিনেন?
লেখক: সভাপতি, সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), বিয়ানীবাজার, সিলেট।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 990 বার