সাংবাদিক তুরাব হত্যা : সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আজবাহার ও দস্তগীরসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা

Daily Ajker Sylhet

দৈনিক আজকের সিলেট

১৯ আগ ২০২৪, ০৪:১৯ অপরাহ্ণ


সাংবাদিক তুরাব হত্যা : সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আজবাহার ও দস্তগীরসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা

স্টাফ রিপোর্টার:
ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই সিলেটে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাংবাদিক এটিএম তুরাব। ঘটনার এক মাস পর নিহতের ভাই আবুল আহসান মো. আযরফ (জাবুর) বাদী হয়ে সোমবার (১৯ আগস্ট) সিলেট অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।

বেলা ১১টায় দায়েরকৃত এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল। এজাহারে আসামি হিসেবে পুলিশসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ জনকে। শুনানি শেষে মামলার এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলায় ২ নম্বর আসামি অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ক্রাইম উত্তর) মো. সাদেক দস্তগীর কাউসার, ৩ নম্বর আসামি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ, ৪ নম্বর আসামি সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি) মিজানুর রহমান।

অন্য আসামিরা হলেন- সিলেটের কোতোয়ালি মডেল থানাধীন বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ কল্লোল গোস্বামী, থানার সদ্য সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন, পরিদর্শক (তদন্ত) ফজলুর রহমান, থানার এসআই কাজি ‍রিপন সরকার, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সিসিকের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আফতাব উদ্দিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি পিযূষ কান্তি দে, সিলেট সিটি করপোরেশনের পিআরও সাজলু লস্কর, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সিসিকের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রুহেল আহমদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দাস অনিক, নগরের চালিবন্দর নেহার মঞ্জিলের বাসিন্দা শিবলু আহমদ (মো. রুহুল আমিন), এসএমপির কনস্টেবল সেলিম মিয়া, আজহার ও ফিরোজ।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের মদদপুষ্ট আওয়ামী লীগ দুর্বৃত্তরা ও অবৈধ সরকারের অপেশাদার পুলিশ ও দুর্বৃত্ত দ্বারা ন্যাক্কারজনক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। আসামিরা সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে একজোট হয়ে বাদীর নিরপরাধ ছোট ভাই সাংবাদিক আবু তাহের মো. তুরাবকে (এটিএম তুরাব) হত্যা করা হয়। দিন দুপুরে শত শত মানুষের সামনে উক্ত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা করতে গেলে ২ থেকে ৫ নম্বর আসামি বাদীকে হত্যার হুমকি দেয়। পরে আসামিরা রাষ্ট্রীয় প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাদীকে ঢাকায় নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করান।

আবুল আহসান মো. আযরফ (জাবুর) বলেন, পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ১৮ জনকে এজহারনামীয় আসামি করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত আমাদের সার্বিক অভিযোগ পর্যালোচনা করে সত্যতা পাওয়ায় অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত করেছেন।

বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুর রব বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা আজবাহার আলীর নির্দেশে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সাদেক কাওসার গুলি ছুঁড়েন সাংবাদিক তুরাবকে লক্ষ্য করে। একই সাথে অভিযুক্ত অন্যরাও হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় আসামি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) জুমার নামাজের পর সিলেট মহানগরের বন্দরবাজার এলাকার কালেক্টরেট জামে মসজিদ এলাকায় বিএনপি ও পুলিশের সংর্ঘষের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাংবাদিক তুরাব। হত্যাকান্ডের পাঁচ দিন পর তুরাবের পরিবারের পক্ষ থেকে ৮-১০ জন পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করে কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তবে সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি পুলিশ।

পুলিশ ওই সময় জানায়- আগেই তাদের পক্ষ থেকে বিএনপি ও জামায়াতের ৩৪ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকশকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছে। তাই তুরাবের ভাইয়ের দায়ের করা অভিযোগটি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে রেকর্ড করেছে তারা। তবে পরবর্তীতে জানা যায়, পুলিশের এজাহারে গুলিতে মৃত্যুর বিষয়টি উল্লেখই নেই। এছাড়া পুলিশের এই মামলা ১ মাস পর্যন্ত কাউকে করেনি তারা। তাই বাধ্য হয়ে তুরাবের পরিবারকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছে।

এদিকে, গত বৃহস্পতিবার বিকেল বন্দরবাজারস্থ কোর্ট পয়েন্টকে শহীদ সাংবাদিক এটিএম তুরাব চত্বর ঘোষণা করা হয়। সিলেটের প্রতিনিধিত্বশীল সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে ব্যানার টানিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তুরাব চত্বর নামকরণ করা হয়।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 989 বার