কিভাবে চলছে বিয়ানীবাজার ছাত্রলীগ-ছাত্রদল-ছাত্রশিবির

Daily Ajker Sylhet

দৈনিক আজকের সিলেট

২১ জানু ২০২৩, ০৬:৫৮ অপরাহ্ণ


কিভাবে চলছে বিয়ানীবাজার ছাত্রলীগ-ছাত্রদল-ছাত্রশিবির

স্টাফ রিপোর্টার:
উত্তাল ছাত্ররাজনীতির জন্য সিলেট তথা সারাদেশে পরিচিত বিয়ানীবাজার। মূলত উপজেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজকে কেন্দ্র করে আবির্ভূত হয় এখানকার ছাত্ররাজনীতি। আশির দশক থেকে শুরু করে এ উপজেলায় সকল রাজনৈতিক সংগঠনের মজবুত অবস্থান রয়েছে। তবে আশির দশকের একক শক্তি হিসেবে পরিচিত কমিউনিষ্ট পার্টির ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন এখন বিলুপ্ত প্রায়। কলেজ কিংবা উপজেলার কোথাও ছাত্র ইউনিয়নের কোন কমিটি বা নেতা-কর্মী রয়েছেন খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। সরকারী কলেজসহ পুরো উপজেলায় নব্বইয়ের দশকে উত্তান হওয়া ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবির এখনো স্বকিয়তা বজায় রেখে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ২০০১ সাল থেকে ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরের চলমান আধিপত্য ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে কমতে শুরু করেছে। প্রতিকূল পরিবেশ ও আভ্যন্তরিন কোন্দলের কারণে ছাত্রদল এখন সর্বস্ব ছাত্র সংগঠন। সক্রিয় নেতাকর্মী থাকলেও প্রশাসনিক বৈরিতার দরুণ ছাত্রশিবির এ উপজেলায় প্রকাশে চালাতে পারছে না কোন কার্যক্রম। কলেজ এবং উপজেলায় একক আধিপত্য বিস্তার করে আছে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। কারো সুদিন-কারো দুর্দিন এ অবস্থায় কারা, কিভাবে চালাচ্ছে ছাত্র সংগঠনগুলো। উপজেলা জুড়ে তাদের তৎপরতা, আলোচিত-সমালোচিত একাধিক কর্মের ফলে বর্তমানে কোন সংগঠন কোন পর্যায়ে রয়েছে তা জানতে এ প্রতিবেদক দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে আলোচনার পাশাপাশি আভ্যন্তরিন বিষয়ে বিষদ জানতে চালিয়েছেন অনুসন্ধান। অনুসন্ধান এবং দলীয় নেতাকর্মীদের কথায় ফুটে ওঠা বিষয়গুলো নিয়ে এ সংখ্যার বিশেষ প্রতিবেদন।

ছাত্রলীগ: সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ একক আধিপত্য বিস্তার করে আছে বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ, পৌরসভা এবং উপজেলার চারখাই, আলীনগর, শেওলা, কুড়ার বাজার, মাথিউরা, তিলপাড়া, লাউতা ও মুড়িয়া ইউনিয়নে। দীর্ঘ দিন থেকে কমিটি না থাকায় গ্রæপিং দ্ব›দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এ সংগঠনে। বর্তমানে নিজেদের মধ্যে ৫টি গ্রুপ রয়েছে। মূলধারা গ্রুপ, জামাল গ্রুপ, পল্লব গ্রুপ, রিভারবেল্ট গ্রুপ ও পাভেল গ্রুপ নামের ৫টি গ্রুপ কলেজ ও পৌরে নিয়মিত সভা, মিছিল ও সমাবেশ করে থাকে। কয়েকটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন অছাত্র, বয়স্ক এমনকি হত্যা মামলার পলাতক আসামীও। যার ফলে প্রকৃত ও মেধাবী ছাত্ররা এসব গ্রুপে যোগ দেয়া থেকে বিরত রয়েছে। কলেজ ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি সময় পর পর নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের কারণে বিয়ানীবাজারে এক রকমের আতংকের নাম ছাত্রলীগ।

অভিযোগ রয়েছে অভিভাবক সংগঠন আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতারা একেকজন একেক গ্রুপের সাথে রয়েছেন। পরোক্ষভাবে তারা নিজস্ব গ্রুপকে সব ধরনের সহায়তা করে থাকেন। গ্রুপগুলোর মধ্যে জামাল গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন জামাল হোসেন। অনেক বছর আগেই তার ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে। পল্লব গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন আবুল কাশেম পল্লব। এই গ্রুপটি ‘মন্ত্রী বিরোধী’ গ্রুপ হিসেবে পরিচিত এবং কোনঠাসা। অনেক আগেই পল্লবের ছাত্রত্ব শেষ হলেও পরোক্ষভাবে তিনি তার প্রতিষ্ঠিত গ্রুপের কলকাড়ি নাড়ছেন। রিভারবেল্ট গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাথিউরা ইউনিয়নের ছাত্রনেতারা। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আমান উদ্দিনসহ কয়েকজন রয়েছেন এ গ্রুপের মূল নেতৃত্বে। পাভেল গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা পাবেল মাহমুদ। ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদ হোসেন জুয়েলসহ কয়েকজন রয়েছেন পাভেল মাহমুদের সাথে মূল নেতৃত্বে। এ গ্রুপটিও বেশ সক্রিয় তবে বিভিন্ন কারণে কোনঠাসা। দল ক্ষমতাসীন থাকার পরও অন্যান্য গ্রুপের চেয়ে এ গ্রুপের নেতাকর্মীরা সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক কর্মকান্ডে কম মূল্যায়ন পাচ্ছেন বলে তাদের অভিযোগ। মূলধারা গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা কাওছার আহমদসহ কয়েকজন। এ গ্রুপটি সরাসরি মন্ত্রীর আস্থাভাজন গ্রুপ হিসেবে পরিচিত। সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর বিয়ানীবাজারের অনুষ্ঠানগুলোতে এ গ্রুপের বেশিরভাগ নেতাকর্মীকে দেখা যায়। দিনদিন আভ্যন্তরিন কোন্দ এবং গ্রুপ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে কমিটি ঘোষিত না হওয়াকে দায়ী করেছেন সংগঠনটির নেতারা। কমিটি না থাকায় দ্ব›দ্ব এবং নিরাপত্তাহীনতার ভয়ে তৃণমূল কর্মীরাও নিক্রিয় হয়ে পড়েছেন। কমিটি গঠনের জন্য জেলা ও কেদ্রীয় ছাত্রলীগের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পাভেল মাহমুদ বলেন, কয়েক বছর থেকে কমিটি হচ্ছে হচ্ছে বলে না হওয়ায় নিজেদের নামের জন্য ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে গ্রুপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এর ফলে মূল সংগঠন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সংঘাত সংঘর্ষ হচ্ছে-ছাত্ররা মূখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য জেলা সভাপতি-সেক্রেটারী দ্রুত কমিটি গঠনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সংগঠনের সহযোগিতা নিয়ে হলেও অছাত্র, মামলাবাজ, খুনী, বখাটেদের সরিয়ে প্রকৃত মেধাবী যোগ্যতাসম্পন্ন ছাত্রদের হাতে কলেজ, পৌর ও উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব তুলে দেয়া সকল নেতাকর্মীর দাবী। ছাত্রলীগ নেতা কাওছার আহমদ বলেন, কমিটি গঠন হলে সংঘাত, সংঘর্ষ, গ্রুপিং দন্ধ নিরসন হবে । এজন্য ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কার্যকরি উদ্যোগ কামনা করছেন তিনি। ছাত্রলীগ নেতা আমান উদ্দিন, কলিম উদ্দিন, কেএইচ সুমন, মিল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন কমিটি গঠনের জোর দাবী জানিয়েছেন।

ছাত্রদলঃ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এখন ডুবো ডুবো অবস্থায়। নেতৃত্ব শূন্যতা, আভ্যন্তরিন কোন্দল এবং হামলা-মামলার ভয়ে কলেজ, পৌর এবং শেওলা-মাথিউরা ইউনিয়ন ছাড়া অন্য কোনো ইউনিয়নে সংগঠনটির কোনো কার্যক্রম নেই। যার ফলে ঐক্যবদ্ধ ছাত্রদলে গ্রুপিং দন্ধ রয়েছে। কলেজ ও পৌর শাখায় নাম সর্বস্ব কয়েকজন নেতা ছাড়া সংগঠনটির কর্মী খোঁজে পাওয়া দুষ্কর। কলেজ ক্যাম্পাসে মাঝে মাঝে অবস্থান নিলেও সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের প্রভাবের কারণে ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক কোনো কাজ করতে দেখা যায়নি তাদের। পুরনো ছাত্রদল নেতারা মামলা এবং গ্রেফতার থেকে বাঁচতে সরকার দলীয়দের সাথে আঁতাত করে চলতে দেখা গেছে। দলের কেন্দ্রীয় কোনো কর্মসূচি যেমন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার জন্মবার্ষিকি হলে কেক কেটে বা ছোট পরিসরে আলোচনা করে দায়সাড়া কর্মসূচী পালন করেন এখানকার নেতারা। ছাত্রদল কয়েকজন সিনিয়র নেতা দীর্ঘদিন থেকে কোনো সাংগঠনিক কাজে দেখা যায়নি। গ্রেফতারের ভয়ে বাবর মধপ্রাচ্যের দেশ চলে গেছেন বলে জানা গেছে। বর্তমান উপজেলা বিএনপির সিনিয়রদের নেতাদের সাথে ছাত্রদল নেতৃত্বে উপজেলা কমিটি কিছুটা সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে।
ছাত্রশিবির: ইসলামী ছাত্রশিবির বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নিতে পারছে না ২০০৯ সালের ১৯ জুন ছাত্রলীগের সাথে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থেকে। ক্যাম্পাসে না গেলেও দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংগঠনটি প্রতি বছর কলেজ কমিটি গঠন করে সংবাদ মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রেরণ করে। কলেজ কমিটি এইচএসসি, এসএসসি সাজেসন্স ও তাদের মাসিক কিশোর কণ্ঠের নামে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে নিজেদের উপস্থিতির জানান দেয়।

কলেজ ছাড়া উপজেলায় ধর্মভিত্তিক সর্ববৃহৎ এ ছাত্র সংগঠনের আরো ৩টি শাখা রয়েছে। উপজেলা দক্ষিণ, উত্তর এবং পশ্চিম নামে পরিচালিত এসব থানা শাখার প্রধান দক্ষিণ শাখা। উপজেলার সকল ইউনিয়নেই সংগঠনটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। তবে মামলায় জর্জরিত সংগঠনটির কার্যক্রম সীমিত। ধারনা করা হচ্ছে কৌশলগত কারনেই জামায়াতের মত নীরব রয়েছে শিবির। দলীয় সূত্রমতে, সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিয়ানীবাজার থানায় মামলা রয়েছে। আওয়ামীলীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে আদালত, কারাগারে সময় কাটছে।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার