সিলেটে এক স্ত্রীর দুই স্বামী: আটকের পর কী ঘটলো তাদের ‘কপালে’?
১৯ জানু ২০২৩, ০৭:০৩ অপরাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার:
এক স্ত্রীর দুই স্বামী নিয়ে সিলেটে তোলপাড় চলছে। এ তিনজনকে পুলিশে সোপর্দ করা হলেও শাহপরাণ থানাপুলিশের হাত থেকে ফসকে গেছেন ওই নারীর প্রথম স্বামী দাবিদার ব্যক্তি। আর দ্বিতীয় স্বামী ও স্ত্রীকে বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) বিকালে আদালতে প্রেরণ করেছে কোতোয়ালি থানাপুলিশ।
এর আগে সিলেট সিটি করপোরেশনের ২২, ২৩ ও ২৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেবেকা আক্তার লাকী এ তিনজনকে মহানগর পুলিশের শাহপরাণ থানাপুলিশের হাতে তুলে দিলেও মূল ঘটনা কোতোয়ালি থানাধীন এলাকায় হওয়ায় বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাদের কোতোয়ালি থানায় পাঠানো হয়। তবে শাহপরাণ থানা থেকে বেরিয়ে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যান ওই নারীর ‘প্রথম স্বামী’।
সিলেটে বুধবার ঘটে যায় এক অদ্ভূত ঘটনা। এক স্ত্রীর বের হন দুই স্বামী। তারা দু’জন রাস্তায় সেই স্ত্রীকে নিয়ে করেন টানাটানি। হয় হাতাহাতিও। বুধবার (১৮ জানুয়ারি) বিকাল ৫টায় মহানগরের লামাবাজারস্থ আয়েশা মেডিকেয়ার জেনারেল হাসপাতালের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, কুমিল্লা জেলার দেবিদ্দার থানার শাহজাহান মিয়ার মেয়ে আইরিন সুলতানাকে (৩৫) ১৯ বছর আগে বিয়ে করেন চাঁদপুর জেলার শাহারাস্তি থানার বাদিয়া গ্রামের রুস্তম আলীর ছেলে মো. খোকন মিয়া (৪৫)। বিয়ের পর একে একে তাদের ঘরে জন্ম হয় চার সন্তানের। একপর্যায়ে তিনি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সিলেটে আসেন। পরে ২০১৯ সালের শুরুতে চলে যান মালদ্বীপ। এরপরই সুলতানা বিভিন্নজনের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান। একপর্যায়ে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার কাউয়াদি গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে কবির হোসেনের (৩৬) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে সুলতানার। ১৫ মাস আগে সিলেটে কোর্ট ম্যারেজও করে ফেলেন কবির এবং সুলতানা। চার সন্তান ও স্বামী খোকনের সংসার ছেড়ে চলে সুলতানা যান কবিরের ঘরে। কবিরের সঙ্গে বিয়ের সময় সুলতানা নিজেকে তালাকপ্রাপ্তা উল্লেখ করেন।
খবর পেয়ে দেশে ফিরে হন্য হয়ে সুলতানাকে খুঁজতে থাকেন খোকন। অবশেষে বুধবার বিকেল ৫টায় সিলেট মহানগরের লামাবাজারস্থ আয়েশা মেডিকেয়ার জেনারেল হাসপাতালের সামনে রাস্তায় সুলতানাকে খোকন পেয়ে যান। এসময় তার বর্তমান স্বামী কবিরও সঙ্গে ছিলেন। কবির হোসেন দক্ষিণ সুরমার কদমতলিস্থ ড্রাইভার রেস্টুরেন্টের বাবুর্চি। বিয়ের পর সুলতানাকে তিনি আয়েশা মেডিকেয়ারে আয়া’র চাকরি পাইয়ে দেন।
আয়েশা মেডিকেয়ার জেনারেল হাসপাতালের সামনের রাস্তায় সুলতানা ও কবিরকে পেয়ে পাকড়াও করেন খোকন। এসময় তাদের মাঝে বাকবিতন্ডা, হাতাহাতি এবং স্ত্রীকে নিয়ে টানাটানি হয়। পরে খোকন ও তার সঙ্গীরা এ দুজনকে জোরপূর্বক ধরে শাহজালাল উপশহরের তেররতনে নিয়ে যান। সেখানে একটি বাসায় খোকন সন্তান ও তার বোনকে নিয়ে থাকেন। পরে খোকন বিষয়টি নিয়ে সিসিকের ২২, ২৩ ও ২৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেবেকা আক্তার লাকীর দ্বারস্থ হন। লাকি পরে এ তিজনকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) শাহপরাণ থানাপুলিশের হাতে তুলে দেন।
এদিকে, শাহপরাণ থানাপুলিশ এ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদে পর জানতে পারে মূল ঘটনা কোতোয়ালি থানাধীন এলাকায়। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ তিনজনকে কোতোয়ালি থানাপুলিশে পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়। তবে এসময় খোকন পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে সটকে পড়েন।
পরে সুলতানা ও কবিরকে কোতোয়ালি থানায় পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার সারাদিন গড়িয়ে গেলেও খোকনের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি কিংবা তিনি থানায় এ দুজনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও দায়ের করেনি। পরে বৃহস্পতিবার বিকেলে কোতোয়ালি থানাপুলিশ সুলতানা ও করিবরকে আদালতে প্রেরণ করে।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন- ওই নারীর প্রথম স্বামী দাবিদার ব্যক্তি কাল (বুধবার) রাতেই শাহপরাণ থানার সামন থেকে সটকে পড়েছে। আজ সারাদিন তার কোনো খোঁজ নেই। কোনো অভিযোগও দায়ের করেনি। শেষ পর্যন্ত বাকি দুজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত এদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার