সিলেটে ২৯ দিনে সড়কে ঝরলো ২৬ প্রাণ

Daily Ajker Sylhet

দৈনিক আজকের সিলেট

০৪ মার্চ ২০২৪, ০৬:০২ অপরাহ্ণ


সিলেটে ২৯ দিনে সড়কে ঝরলো ২৬ প্রাণ

স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেট বিভাগে সড়কে শুধু দীর্ঘই হচ্ছে লাশের মিছিল। গত এক মাসে (ফেব্রুয়ারিতে) এ বিভাগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২৬ জন। আহত হয়েছেন ৬৬ জন।

মাসটির শেষ দিনেই (২৯ ফেব্রুয়ারি) ৫ ঘণ্টার ব্যবধানে সিলেটের সড়কে ঝরেছে ৩ প্রাণ।

জানা যায়, ২৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টার দিকে সিলেট-তামাবিল সড়কের খাদিম এলাকায় জাফলংগামী একটি মাইক্রোবাসচাপায় সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তা পপি রানী তালুকদার (২৯) গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে মারা যান।

নিহত পপি রানী তালুকদার (২৯) নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ থানার বল্লবপুর গ্রামের পাবেল সরকারের স্ত্রী। তিনি স্বামীর সঙ্গে সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের কোয়ার্টার-২ এ থাকতেন। তার দুটি শিশুসন্তান রয়েছে।

একই দিন দুপুর ১টায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লালবাজার এলাকায় তিন গাড়ির সংঘর্ষে এক অটোরিকশাচালক ও এক নারী নিহত হয়েছেন। লালাবাজার এলাকার কুশিয়ারা পেট্রোল পাম্পের অদূরে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা ছিলেন- সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলইরগাঁওয়ের সোনা মিয়ার স্ত্রী নাজমা বেগম (৪৩) ও অটোরিকশাচালক মুনসুর আলী (২৭)। তিনি সিলেটের বিশ্বনাথের পীরেরবাজার বর্ণী গ্রামের ধনাই মিয়ার ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া সিএনজিচালিত রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিকশার সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পিকআপ ও প্রাইভেটকারের সংঘর্ষ হয়। এতে অটোরিকশাচালক ও তার ৫ যাত্রী আহত হন। এর মধ্যে নাজমা বেগম ও মুনসুর আলীর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিলো। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। হাসপাতালের নেওয়ার পর নাজমা ও মুনসুর মারা যান।

নিহত নাজমার স্বামী জানিয়েছিলেন- তাঁর স্ত্রী অসুস্থ ছিলেন। সিলেটে ডাক্তার দেখিয়ে অটোরিকশাযোগে বিশ্বনাথ যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন।

এদিকে, রবিবার (৩ মার্চ) নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) সিলেট বিভাগীয় কমিটি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে- ফেব্রুয়ারি মাসে সিলেট বিভাগে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৬ জন নিহত ও ৬৬ জন আহত হয়েছেন। বিভাগের মধ্যে সিলেট জেলায় ১৫ দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত ও ৩৬ জন আহত, সুনামগঞ্জ জেলায় দুটি দুর্ঘটনায় দুজন নিহত ও তিনজন আহত, মৌলভীবাজার জেলায় চার দুর্ঘটনায় ছয়জন নিহত ও চারজন আহত এবং হবিগঞ্জ জেলায় চার সড়ক দুর্ঘটনায় চারজন নিহত ও ২৩ জন আহত হয়েছেন।

এর আগে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে- নতুন বছরের প্রথম মাস অর্থাৎ- জানুয়ারিতে সিলেট বিভাগে সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন ৪১ হন। আহত হয়েছেন ৪৪ জন। দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৮টি।

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংস্থাদের পর্যবেক্ষণমতে এসব সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হচ্ছে- ট্রাফিক আইনের অপপ্রয়োগ, দুর্বল প্রয়োগ, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনিয়ম দুর্নীতি ব্যাপক বৃদ্ধি, মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও তিন চাকার যানের ব্যাপক বৃদ্ধি ও এসব যানবাহন সড়ক মহাসড়কে অবাধে চলাচল, সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কে বাতি না থাকা, রাতের বেলায় ফক লাইটের অবাধ ব্যবহার, সড়ক-মহাসড়কে নিমাণ ক্রটি, ফিটনেস যানবাহন ও অদক্ষ চালকের হার ব্যাপক বৃদ্ধি, ফুটপাত বেদখল, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা, উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাদাঁবাজি, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন এবং বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানো।

দুর্ঘটনা রোধে কয়েকটি সুপারিশও দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সেগুলো হচ্ছে- রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে প্রাথমিক উৎস থেকে সড়ক দুর্ঘটনার পুর্নাঙ্গ ডাটা ব্যাংক চালু করা, স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মতো ছোট ছোট যানবাহন আমদানী ও নিবন্ধন বন্ধ করা, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে যানবাহনের ফিটনেস প্রদান, রাতের বেলায় বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চালকদের রিফ্লেক্টিং ভেস্ট পোশাক পরিধান বাধ্যতামূলক করা, সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘন্টা সুনিশ্চিত করা, রাতের বেলায় চলাচলের জন্য জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে পর্যাপ্ত আলোক সজ্জার ব্যবস্থা করা, ব্লাক স্পট নিরসন করা, সড়ক নিরাপত্তা অডিট করা, স্টার মানের সড়ক করিডোর গড়ে তোলা, দেশে সড়কে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ’র চলমান গতানুগতিক কার্যক্রম অডিট করে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং প্রাতিষ্ঠানিক অকার্যকারিতা সংস্কার করা।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 985 বার