২০ ঘণ্টা বন টহল ফাঁড়ির পাশে থাকা বাঘ তিনটি আর আসেনি
০৫ ফেব্রু ২০২৩, ০৭:২২ অপরাহ্ণ
বাগেরহাট প্রতিনিধি:
বনকর্মীদের সবার সামনে দিয়েই হেঁটে পুকুরে নামে দুটি বাঘ। তারা সেখানে পানি পান করে। পুকুর থেকে উঠে পাড়েই হাঁটাহাঁটি করতে থাকে বাঘ দুটি। একপর্যায়ে পাড়েই বসে পড়ে বেঙ্গল টাইগার জুটি। এভাবে দুপুর পেরিয়ে সন্ধ্যা হলেও বন টহল ফাঁড়ির পুকুরপাড়ে প্রায় একই স্থানে থাকে বাঘ দুটি। রাতে সেখানে আসে আরও একটি বাঘ।
শুক্রবার দুপুর থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত সুন্দরবনের অভ্যন্তরের চান্দেশ্বর টহল ফাঁড়িতে বনকর্মীদের কাছাকাছি এভাবেই অবস্থান করে তিনটি বাঘ। প্রায় ২০ ঘণ্টা ধরে ফাঁড়িতে বনকর্মীদের কাছাকাছি থাকার পর বাঘগুলো ফিরে গেছে বনের ভেতরে। তবে এর পর থেকে আজ রোববার দুপুর পর্যন্ত ওই ফাঁড়িতে নতুন করে আর বাঘ আসেনি।
চান্দেশ্বর টহল ফাঁড়িটি সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সুপতি স্টেশনের অধীনে। ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ আজ দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, গতকাল শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত বাঘগুলো তাঁদের ফাঁড়ির পুকুরপাড়, রান্নাঘরসহ আশপাশে ছিল। এর পর থেকে বাঘগুলোকে ওই এলাকায় আর দেখা যায়নি।
ফারুক আহমেদ আরও বলেন, ‘গত শুক্রবার দুপুরে আমরা পুকুরপাড়ে প্রথম বাঘ দেখি। তারা পানি খেতে বন অফিসের পুকুরপাড়ে এসেছিল। বনের নদী-খালগুলোর পানি লবণাক্ত হওয়ায় বন্য প্রাণীসহ জেলে ও বন বিভাগের কর্মীরা মিষ্টি পানির এই পুকুর থেকেই খাবার পানি নেন। পুকুর থেকে পানি খেয়ে বনে ফিরে না গিয়ে কেন্দ্রের অফিসের আশপাশেই ছিল বাঘগুলো।’
এভাবে চোখের এত কাছে বাঘ দেখে ভিডিও ধারণ করেন বনকর্মীরা। ওই ভিডিওতে তাঁদের বলতে দেখা যায়, ‘কত সুন্দর দেখতে সুন্দরবনের বাঘ!’
সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মোহাম্মদ শামসুল আরেফীন বলেন, চান্দেশ্বর ফাঁড়ির পাশেই বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য। ফাঁড়ির ইনচার্জ ফারুক আহমেদ প্রথমে বাঘ দুটি দেখেন। পরে তিনি অন্যদেরও ডেকে দেখান। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরাপদ দূরত্বে থেকেই বাঘগুলোকে দেখছিলেন।
দীর্ঘ সময় ধরে সামনে থেকে বাঘ দেখার বিষয়ে বন কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমি তিন মাস ধরে সুন্দরবনের এই কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছি। বাঘ ছাড়া এই বনের প্রায় সব প্রাণীই দেখেছি। ২০-২২ দিন আগে আমাদের পুকুর পাড়ে একদিন সকালে উঠে বাঘের পায়ের ছাপ দেখেছিলাম। আর এবার বাঘের দেখা পাওয়া গেল। খুব ভালো লাগছিল বাঘ দেখে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে অফিসের পাশে বাঘ থাকায় কিছুটা আতঙ্কিতও ছিলাম।’
এভাবে এত দীর্ঘ সময় ধরে জনসমক্ষে বাঘ থাকতে পারে ভাবতেই পারেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সামনে থেকে দেখলেও বাঘগুলো কখনো সেভাবে অ্যাগ্রেসিভ হয়নি। আমরাও তাদের উত্ত্যক্ত করিনি। ওরা ওদের মতো ছিল, আমরা আমাদের মতো। সময়টা আমরা দারুণ উপভোগ করেছি।’
বাঘ বেড়েছে, নাকি খাবারের সংকট—এমন প্রশ্নের জবাবে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বন কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘ওই এলাকায় বাঘের আনাগোনা বেড়েছে। বাঘের সংখ্যা বেড়েছে কি না, তা জরিপের পর বলা যাবে।’
সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা ১১৪টি। বর্তমানে সুন্দরবনে বাঘশুমারি চলছে। বাঘের জীবনাচরণ থেকে জানা যায়, সাধারণভাবে বনের নির্দিষ্ট এলাকায় একটি মাত্র পুরুষ বাঘ থাকে। প্রতিটি পুরুষ বাঘের টেরিটরি আলাদা হয়। তবে একটি পুরুষ বাঘের সঙ্গে একাধিক স্ত্রী বাঘ থাকতে পারে।
বাঘের এভাবে একসঙ্গে ঘোরাফেরার বিষয়ে চান্দেশ্বর টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, যেহেতু এখন বাঘের প্রজনন মৌসুম। তারা একসঙ্গে চলাফেরা করছে। প্রথম আসা বাঘ দুটির আকৃতি দেখে একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী বাঘ বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা একটা জুটি বলে মনে হয়েছে। তৃতীয় বাঘটি রাতে দেখায় তার আকার এবং বাঘটি পুরুষ নাকি স্ত্রী, তা বোঝা যায়নি।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার