“২০২৪ বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কার কমিটির উদ্দেশ্যে কিছু কথা”
১৯ সেপ্টে ২০২৪, ০৬:৫৮ অপরাহ্ণ
এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন:
সংবিধানে বাংলাদেশ কিভাবে পরিচালিত হবে জানি, কিন্তু মানি না। ক্ষমতাসীন দল নিজেদের স্বার্থে ইচ্ছামত সংশোধন করে সংবিধান না মানার সংস্কৃতি চালু করে থাকে। বাংলাদেশ সংবিধান এ পর্যন্ত প্রায় ষোল বার সংশোধন করা হইয়াছে, যাহা জাতির জন্য লজ্জাজনক ও সংবিধান প্রনয়ন কমিটি ১৯৭২ তাদের জন্য দুঃখজনক। ২০২৪ সালের সংবিধান সংস্কার কমিটি এমন কঠিনতম ধারা, উপধারা বা বিধি প্রনয়ন করিবেন যাহাতে কাটছাট করার সুযোগ না থাকে। একান্তই যদি সংশোধন করতে হয়, তাহলে গনভোটের মাধ্যমে জনগনের মতামত নিয়ে পার্লামেন্টের শতভাগ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে সংশোধন করা যাইতে পারে। বৃটেনে কিন্তু কোন লিখিত সংবিধান নেই। প্রথাই তাদের সংবিধান। সংবিধান সংস্কার কমিটির নিকট সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরছিঃ
* প্রথমতঃ সংবিধানে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা চালু করতে হবে। নি¤œ কক্ষের সদস্যগন যাচাই-বাচাই করে যদি জনস্বার্থে কোন আইন প্রনয়ন করে থাকেন, এবং স্পীকার তা অনুমোদন দেন তাহলে উক্ত আইনটি উচ্চ কক্ষের সদস্যগন যদি মনে করেন জনস্বার্থে আরও কিছু সংযোজন বিয়োজনের প্রয়োজন তাহলে উচ্চ কক্ষের সদস্যগনের ভোটাভোটির মাধ্যমে স্পীকারের অনুমোদন দিবেন। তবে শর্ত থাকে যে, উভয় কক্ষের সদস্যগন জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হতে হবে। উভয় পদে প্রার্থী হতে হলে শিক্ষাগত যোগ্যতা নুন্যতম বি.এ বা সমামানের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রার্থীর থাকতে হবে। আব্রাহাম লিংকনের গনতন্ত্রের সংজ্ঞায় সমর্থন না করিলে ও বাস্তবতার আলোকে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতা মূলক হওয়া আবশ্যক। মুর্খের শাসন বা শিল্পপতি বা চোরাইপথে উপার্জিত লেনদেন এর মাধ্যমে মনোনয়ন বানিজ্য বন্ধ হবে। অন্যদিকে শিক্ষা ব্যবস্থা প্রসারিত হইবে।
* দ্বিতীয়তঃ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে টি.আই.এন. বাধ্যতামূলক। প্রার্থীর জাবেদা নকল ১০.বি তে বর্ণিত সম্পদ বিবরনী সুনির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ থকতে হবে। প্রার্থীর নমিনেশন জমা দেওয়ার পর স্কুটুনি হওয়ার পূর্বে সম্পদের যাচাই বাছাই করে সংশ্লিষ্ট স্কুটুনিকারক এর মতামতের ভিত্তিতে সম্পদের চুড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে হবে এবং প্রার্থী তা স্বীকার করে নিতে বাধ্য। তখনই প্রার্থী বৈধ বলে গন্য হবেন। পরবর্তীতে যদি প্রার্থীর গোপন কোন সম্পদ থেকে থাকে, তাহলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকুলে চলে যাবে। প্রার্থী কোন আইন আদালতে স্মরণাপন্ন বা নির্বাচন কমিশনের আদেশের চ্যালেঞ্জ করে মামলা করার ক্ষমতা থাকবে না। নির্বাচিত হওয়ার পর বৈধভাবে যদি আয় করে থাকেন, এবং সুনির্দিষ্ট প্রমানাদী প্রদর্শন সাপেক্ষে পরবর্তীতে কর বৎসরে ১০. বি তে সংযোজন করে নিতে পারিবেন।
* তৃতীয়তঃ যুক্তরাষ্ট্রের আদলে সরাসরি প্রার্থীকে ভোট না দিয়ে দলীয় প্রতীকে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা যাইতে পারে। দলীয় প্রতীক বিজয়ী হলে দল সংবিধানের আলোকে প্রার্থী নির্বাচন করবেন। দলীয় নীতি মালার আলোকে। এক্ষেত্রে দলকে কমিশন, সংবিধানের আলোকে সংস্কারের জন্য চিঠি দিবেন।
* চতুর্থতঃ প্রার্থীর দেওয়া সকল তথ্যই স্কুটুনির পূর্বে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যাচাই-বাচাই করে প্রতিবেদন দাখিল করিতে হইবে। এক্ষেত্রে কমিশন কোন ভূল তথ্য উপস্থাপন করিলে উপস্থাপনকারীকে চাকুরিচ্যুত বা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করিবেন উর্ধতন কর্তৃপক্ষ। তবে স্কুটুনিকারক যে সব ভূয়া অভিযোগে প্রার্থীতা বাতিল করিয়াছেন, সঠিক প্রমান সহ প্রার্থীকে জেলা প্রশাসক বা কমিশন প্রধানকে লিখিতভাবে আপীল আবেদন করিতে হইবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। বৈধ আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হলে প্রার্থীতা হওয়ার সুযোগ নেই। অন্যকোন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহন করে থাকলে, সে কখন ও স্থানীয় বা জাতীয় কোন নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে না। প্রার্থী হতে হলে, নুন্যতম বাংলাদেশে নিয়মিতভাবে অন্তত:১০ বৎসর অবস্থান করতে হবে। তাহাকে ঘোষনা প্রদান করতে হবে নির্বাচিত হলে ম্যায়াদকালীন সময়ে বিনা প্রয়োজনে এক মাসের অধিককাল বিদেশে অবস্থান করতে পারবেন না। যে দলই তাহাকে মনোনয়ন দেন না কেন, তাহাকে দলের সদস্যপদ গ্রহনের পর নিয়মিত বাংলাদেশে অবস্থান করে বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকতে হবে।
* পঞ্চমতঃ ন্যায় পাল নিয়োগকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। সরকার গঠনের ৩ মাসের মধ্যে। ন্যায় পালই তাহার বৈধ প্রতিনিধির মাধ্যমে সরকারের স্বেচ্ছাচারিত বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করিতে পারিবেন। ন্যায় পালের সিন্ধান্তের বিরুদ্ধে কোন আদালতে ষ্টেটাস্ক বা অন্তবর্তী নিষেধাজ্ঞা চাইয়া মামলা করিতে পারিবেন না।
* ষষ্টতঃ জনগনের স্বার্থে প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরন হওয়া বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে প্রতিটি বিভাগকে প্রদেশ ঘোষনা করতে হবে। সেক্ষেত্রে লজিষ্টিক সাপোর্ট দেওয়ার জন্য নি¤œ কক্ষ ও উচ্চ কক্ষ প্রয়োজনীয় আইন প্রনয়ন করে প্রদেশকে শক্তিশালী করতে হবে।
* সপ্তমতঃ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন বাধ্যতামূলক হতে হবে। এক্ষেত্রে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক। যেমন: ইউ/পি মেম্বার হতে হলে নুন্যতম মাধ্যমিক বা সমমান, ইউ/পি চেয়ারম্যান/ মেয়র নুন্যতম বি.এ বা সমমান, উপজেলা চেয়ারম্যান নুন্যতম বি.এ বা সমমান এবং স্থানীয় বিচার কার্যক্রম বা আর্থিক জরিমানার ক্ষমতা দিয়ে আইন প্রনয়ন করতে হবে নি¤œ কক্ষ ও উচ্চ কক্ষের সমন্বয়ে। বিচার সঠিক না হলে বিক্ষোব্ধ ব্যক্তি ন্যায় পালের মনোনীত ব্যক্তির নিকট অভিযোগ দাখিল করিতে পারিবেন। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির অভিযোগ যদি সঠিক হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট বিচারককে পদচ্যুত বা সাসপেন্ড করিতে পারিবেন।
লেখক: সভাপতি, সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), বিয়ানীবাজার, সিলেট, মোবাইল ০১৮১৯১৭৬২১৭।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 988 বার