হবিগঞ্জের স্বামীকে নিয়ে যা বললেন সেই পাকিস্তানি নারী
১৬ ডিসে ২০২৩, ০২:১৪ অপরাহ্ণ
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:
স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে আসা পাকিস্তানি নারী মাহা বাজোয়া (৩২) তার স্বামী সাজ্জাদ হোসেন তালুকদারের (৩৫) বিরুদ্ধে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা করেছেন। বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) তিনি তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট এমএ মজিদের চেম্বারে এ বিষয়ে কথা বলেন। তার ওই বক্তব্যের ৬ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পাওয়া গেছে।
সেখানে মাহা বাজোয়া বলেন, ১০ বছর আগে আমার বিয়ে হয়েছে। আমার স্বামী সাজ্জাদ হোসেন তালুকদার। সে ১০ বছর আগে পাকিস্তান এসেছিল। তারপর সে আমাকে অনেক ভালোবাসে বলে জানায়। তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না, অনেক খুশি রাখব এসব বলে। তারপর ২০১৪ সালে পাকিস্তানে আমাদের বিয়ে হয়। এরপর সাজ্জাদ দুবাই চলে যায়। প্রতিবছরই সে পাকিস্তানে আমার কাছে আসত।
২০১৮ সালে আমি চুনারুঘাটে আমার শ্বশুর বাড়ি যাই। পরে আমি আবার পাকিস্তান ফিরে যাই। আর আমার স্বামী সাজ্জাদ দুবাই চলে যান। ২০১৯ সালে সে আবারও পাকিস্তানে আমার কাছে আসে। তখন আমি তাকে শ্বশুরবাড়ি বাংলাদেশ বা সে যে জায়গায় চাকরি করে সেখানে আমাকে রাখতে বলি। তখন সে আমাকে বলে করোনা ভাইরাসের কারণে তার অবস্থা খুবই খারাপ। চাকরি চলে গেছে। করোনাভাইরাস শেষ হলেই সে আমাকে তার সঙ্গে নিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, করোনা ভাইরাস শেষে আমি আমার মেয়ের পাসপোর্ট তৈরি করি। সাজ্জাদ পাকিস্তান না আসার কারণে মেয়ের পাসপোর্টে তার নাম দিতে পারছিলাম না। আমি তখন আমার স্বামীর সাথে যোগাযোগ করলে সে জানায় দুবাইতে একটি নাইট ক্লাবে তার চাকরি হয়েছে।
আমি দুবাইতে যাওয়ার কথা বললে সে জানায় করোনা ভাইরাসের কারণে তার আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। অনেক টাকা ঋণও হয়েছে তার। তখন আমি আমার বোনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাকে পাঠাই। এরপর আমার অলংকার বিক্রি করে স্বামীকে টাকা দেই। এতে আমার অনেক ক্ষতি হয়। তার জন্য আমি অনেক ত্যাগ করি।
২২ বছর বয়স থেকে ৩২ পর্যন্ত ১০ বছর আমি তার জন্য অপেক্ষা করি। তারপরও আমার স্বামী তার কাছে রাখার মত টাকা নেই বলে আমাকে তার কাছে রাখতে পারবে না বলে জানায়। ২০২২ সালে আমি তাকে বলি- রমজান এসে গেছে আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও। আমি ও আমার মেয়ের পাসপোর্টও রেডি আছে।
রমজানের পর আমাকে বাংলাদেশে নিয়ে যাবে বলে সে জানায়। রমজানের পর তিন মাস পর সাজ্জাদদের সাথে যোগাযোগ করা হলে সে বাংলাদেশে আমাকে নেওয়ার মতো টাকা নেই বলে জানায়। তারপর আমার বাড়ি বিক্রি করে আমি ও আমার মেয়ের ভিসা ও টিকেট করি।
মাহা বাজোয়া বলেন, হোয়াটসঅ্যাপে তাকে ভিসা ও টিকেটের কপি পাঠিয়ে জানাই আমরা সকালে দুবাই আসছি। পরে বাংলাদেশ থেকে কল এসেছে বলে জানায় আমার স্বামী। দুইদিন পর কল করলে সে বলে তার বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়ে আইসিইউতে আছে। যে কারণে তাকে বাংলাদেশে যেতে হচ্ছে।
আমি তাকে বাংলাদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা না দিয়ে বলি- ঠিক আছে তুমি বাংলাদেশ যাও। আবার দুবাই আসার পর আমাকে নিয়ে বাংলাদেশ নিয়ে যেও। কিন্তু সে বাংলাদেশ গিয়েই আমার নম্বর ব্লক করে দেয়। তারপর তার পরিবারের কয়েকজনের নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। তারাও আমার ফোন ব্লক করে দেন। তখন জানতে পারি আমার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনি।
পাকিস্তানি এই নারী বলেন, এর তিন মাস পর সে দুবাই এসে আমার সাথে যোগাযোগ করে। আমিও তখন দুবাইতে তার কাছে যাই। আমি তার দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে জানতে চাইলে সে অস্বীকার করে। আমি তাকে বলি এতদিন কথা না বলায় আমাকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। আমি তখন তাকে পবিত্র কোরআন শরিফ ছুঁয়ে আমাকে না ছাড়ার অঙ্গীকার করতে বলি।
আমরা হোটেলে কয়েকদিন থাকি। একদিন খাবার আনার কথা বলে সে হোটেল থেকে বের হয়ে টিকেট করে বাংলাদেশ চলে যায়। আমি তো না জেনে তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। একপর্যায়ে পুলিশকে জানালে তারা জানায় সাজ্জাদ বাংলাদেশে চলে গেছে। আমি তার সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তার ফোন নম্বর বন্ধ পাই। এরপর আমি বাংলাদেশে আসার জন্য কয়েকবার চেষ্টা করি। কিন্তু স্পন্সরের কারণে আসতে পারিনি।
মাহা বাজোয়া বলেন, এবার আমি আমার স্বামীর জন্য আসিনি। পাকিস্তান ও দুবাইতে সালোয়ার কামিজের ব্যবসা করি। বাংলাদেশের মেয়েরাও পাকিস্তানি সালোয়ার কামিজ পছন্দ করে বলে এখানেও ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ বিষয়ে তার স্বামী সাজ্জাদ হোসেন তালুকদারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মাহা বাজোয়ার সাথে ২০১৪ সালে আমার বিয়ে হয়। ২০২২ সালের মে মাসে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। আমি দুবাইতে যত টাকা রোজগার করেছি, সবই মাহা বাজোয়াকে দিয়ে দিতে হয়েছে। আমার বাংলাদেশি পরিবারকে তার জন্য কোনো অর্থ দিতে পারিনি।
এদিকে বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) সাজ্জাদের পরিবারের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ এনেছেন মাহা বাজোয়া। মারধরের অভিযোগ এনে তিনি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন। খবর পেয়ে চুনারুঘাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে।
মারধরের অভিযোগ প্রসঙ্গে সাজ্জাদ বলেন, মাহা বাজোয়াকে কোনো মারধর করা হয়নি। সে নাটক সাজিয়েছে।
সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার চুনারুঘাট পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর বড়াইল এলাকার শফিউল্লা মজুমদারের ছেলে। আর মাহা বাজোয়া পাকিস্তানের লাহোর প্রদেশের মুলতান রোডের সাকি স্ট্রিট সৈয়দপুরের বাসিন্দা মকসুদ আহমেদের মেয়ে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 983 বার