সিলেটের কৃতি সন্তান নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপিকে উপদেষ্টা মন্ডলিতে নেয়া হয়েছে

Daily Ajker Sylhet

দৈনিক আজকের সিলেট

০৫ জানু ২০২৩, ০১:৫৪ অপরাহ্ণ


সিলেটের কৃতি সন্তান নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপিকে উপদেষ্টা মন্ডলিতে নেয়া হয়েছে

আলী বেবুল, লন্ডন থেকে:
সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন ও কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সভাপতি এবং ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন। এবার উপদেষ্টা মন্ডলিতে নেয়া হয়েছে সিলেটের কৃতি সন্তান বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ নুরুল ইসলাম নাহিদ এম পিকে।

নাহিদকে প্রেসিডিয়াম থেকে উপদেষ্টা পরিষদে নেয়ায় অনেকে সোসিয়্যাল মিডিয়ায় ট্রল করে যাচ্ছেন। এই বুঝি নাহিদের রাজনীতির অবসান হচ্ছে ! তারা নাহিদের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে কিছু না জেনে হিংসা পরায়ণ হয়ে এসব ট্রল করছেন।

গণ মানুষের নেতা ,বরেণ্য রাজনীতিবিদ ও সর্বজন শ্রদ্বেয় নুরুল ইসলাম নাহিদ সুদীর্ঘ ৬০ বছর ধরে তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিয়ে জনগণের অধিকার ও দাবী প্রতিষ্ঠা তথা একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও মর্যাদাশীল জাতি গঠনের জন্য নিরলস ভাবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। জাতীয় পর্যায়ে ষাটের দশকের সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলন,মহান মুক্তিযুদ্ধসহ ঐ সময়ের সকল আন্দোলন-সংগ্রামে একজন বিশিষ্ট ছাত্রনেতা এবং সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সদস্য হিসেবে তিনি ছিলেন প্রথম সারিতে। মুক্তিযুদ্ধকালে একজন সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধা এবং তৎকালীন অন্যতম বৃহৎ ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ যৌথ গেরিলাবাহিনী সংগঠিত করার ক্ষেত্রে তাঁর প্রধান ভূমিকা ছিল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী-সমর্থকদের জন্য প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতায় তিনি দিল্লিতে ভারত সরকারের সর্বোচ্চ স্তরের নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সহযোগিতা লাভের প্রচেষ্টা গ্রহণ করে সফল হন। ন্যাপ-সিপিবি-র সঙ্গে ছাত্র ইউনিয়নে সম্মিলিত গেরিলাবাহিনী গড়ে তোলেন। এই তিন সংগঠনের যৌথ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ভারত সরকারের নিকট থেকে এই বাহিনীর জন্য ট্রেনিং, অস্ত্র ও অন্যান্য সাহায্য আদায় করা এবং শেষ পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেন।

৬ মে, ১৯৭১ দিল্লিতে তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে গণহত্যা ও প্রতিরোধ সংগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। সেখানে প্রায় সকল দেশের প্রচার মিডিয়ার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন এবং তাঁর বক্তব্য দুনিয়ার সর্বত্র ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশের কোন নেতার এটাই ছিল এ ধরনের প্রথম সংবাদ সম্মেলন, যেখানে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়। এ সংবাদ সম্মেলন সারা দুনিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি ও সার্বিক পরিস্থিতির বিবরণ দিয়ে ১০ মে, ১৯৭১, আন্তর্জাতিক ছাত্র ইউনিয়ন (IUS) এবং বিশ্ব যুব ফেডারেশন (WFDY) সহ বিশ্বের সকল আন্তর্জাতিক ছাত্র ও যুব সংগঠন এবং সকল দেশের ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলোর কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদানের আহবান জানিয়ে তিনি চিঠি পাঠান। তারপর সারা বিশ্বের ছাত্র-যুব সংগঠনগুলো দ্রুত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেন।

সিলেট- ৬ ( গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার ) আসন থেকে ৪ বার জাতীয় সংসদের এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। শেখ হাসিনার সরকারে প্রায় ১০ বছর শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একজন সফল শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো)’র
ভাইস-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
দু’মেয়াদে আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন কম গৌরবের বিষয় নয়।
১৯৯৬ সালে প্রথমবার সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত জাতীয় সংসদের স্হায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

নাহিদ পঞ্চখণ্ডের শতবর্ষের রাজনীতিতে এক আলোকিত ও অনন্য নাম।তাঁর নেতৃত্বে গোলাপগঞ্জ – বিয়ানীবাজার উপজেলায় আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে শিক্ষা,যোগাযোগ,গ্যাস,বিদ্যুৎ সহ আর্থসামাজিক নানাবিধ যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে বিগত ৫০ বছরে কোন সাংসদ করতে পারেননি।নাহিদ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
সমগ্র সিলেট বিভাগের গর্ব।
গোলাপগঞ্জ – বিয়ানীবাজারের উন্নয়নের রুপকার।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়ামের পর সর্বোচ্চ পরিষদ – উপদেষ্টা পরিষদ। এ পরিষদে আওয়ামীলীগের স্বনাম খ্যাত ও বরেণ্য রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমদ ও আমির হোসেন আমুর মতো বিজ্ঞরা রয়েছেন।জাতীয় রাজনীতিতে তোফায়েল ,আমু ও নাহিদ এক অপরিহার্য নাম।
আওয়ামীলীগ বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীনতম রাজনৈতিক সংগঠন। এ সংগঠনের সাথে যুক্ত রয়েছেন অগণিত নেতা ও কর্মী। এই বিশাল সংগঠনটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্ব ও প্রজ্ঞার কারণে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাহিদকে অনেক সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছেন। এখনও অনেক সম্মান করেন ও ভালোবাসেন। নাহিদের প্রতি শেখ হাসিনার অগাধ আস্হা ও ভালোবাসা রয়েছে। এটি নাহিদের বড় পাওয়া। একজন দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদের সবসময় বড় পদ-পদবী ও মন্ত্রীত্ব থাকতে হবে। এটি কোন ভাবেই কাম্য নয়। নাহিদ রাজনীতি করেন- দেশের মানুষের জন্য। একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও মর্যাদাশীল জাতি গঠনের জন্য নাহিদ আজীবন রাজনীতি করেছেন। সুদীর্ঘ প্রায় ৬০ বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তাঁর ক্ষমতা ও পদের মোহ ছিলনা। গণ মানুষের কল্যাণ তাঁর রাজনীতির মূল মন্ত্র।

 

ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলনের একজন নিষ্ঠাবান কর্মী হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সাথে ঘনিষ্ঠতা ও ভালেবাসা পাওয়া এটি নাহিদের জীবনের চরম সৌভাগ্য।

আমরা যদি সিলেট বিভাগের নিকট ইতিহাসের কথা পর্যালোচন করি। প্রয়াত রাজনীতিবিদ আব্দুস সামাদ আজাদের পর সিলেট অঞ্চল থেকে আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম কমিটিতে প্রথম যে ব্যক্তি স্হান করে নিয়েছিলেন- তিনি হলেন নুরুল ইসলাম নাহিদ।

রাজনীতিতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বর্ণাঢ্য রাজনীতিবিদ আব্দুস সামাদ আজাদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও নুরুল ইসলাম নাহিদের মতো জাতীয় নেতা সিলেট অঞ্চল থেকে সৃষ্টি হোক এ প্রত্যাশা করি। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় জাতীয় রাজনীতিতে সিলেট বিভাগের মানুষের আশা আকাঙ্খা পূর্ণ হোক।

অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান ও বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নুরুল ইসলাম নাহিদের সুস্বাস্হ্য ও দীর্ঘায়ু জীবন কামনা করছি।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1.1K বার