স্টাফ রিপোর্টার:
জিরো টলারেন্সে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাজধানীসহ সারা দেশে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনে ভিন্ন পথও নেওয়া হতে পারে। সরকারের শীর্ষমহল থেকে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। গুজব-ষড়যন্ত্র ঠেকাতে ভার্চুয়াল জগতে চলছে বিভিন্ন সংস্থার নিয়মিত তদারকি। বিশেষ করে গতকাল সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্য রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহলকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে বলে মনে করেছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, সমাজে স্থিতিশীলতা এবং সাধারণ মানুষের জানমালের প্রশ্নে সরকারের উচিত প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই রোধে গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া অভিযানে কোনো গাফিলতি পাওয়া গেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আনসার বা কারা অধিদপ্তর হোক না কেন, ঠিক মতো কাজ না করলে আইনের আওতায় নিয়ে আসব। গতকাল সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে শায়িত পিলখানায় শহীদ সামরিক কর্মকর্তা ও সদস্যদের উদ্দেশে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে কতিপয় দুষ্কৃতকারী ও স্বার্থান্বেষী মহল হামলা ও নাশকতার মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, খুন, চাঁদাবাজিসহ সাধারণ মানুষের ওপর নৃশংসভাবে হামলা ও আক্রমণ চালাচ্ছে। কক্সবাজারে বিমান বাহিনীর ক্যাম্পে হামলা, সাজেকের আগুনও একই সূত্রে গাঁথা। শিগগিরই এসব ঘটনায় জড়িতের মুখোশ উন্মোচনসহ আইনের আওতায় আনা হবে।
গত সোমবার রাজশাহীতে পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেছেন, একটা গোষ্ঠী চাচ্ছে না আমরা স্থিতিশীল হই। এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। ক্রিমিনালরা হয়তো মনে করছে, এখন আমাদের ধরে আদালতে চালান দিয়ে দেবে। এর চাইতে বেশি কিছু করবে না। তবে আমরা মানবাধিকার নিশ্চিত করেই অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনব। র্যাব, এন্টি টেররিজম ইউনিট ও ডিএমপি যৌথভাবে একটা প্যাট্রোল প্রোগ্রাম নিয়েছে। দেখি উন্নতি হয় কি না! তা না হলে আমাদের অন্য স্টেপ নিতে হবে।
জানা গেছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চোর, ছিনতাইকারী, ডাকাত ও অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে দেশব্যাপী রোবাস্ট প্যাট্রোল, চেকপোস্ট স্থাপনসহ অভিযান কার্যক্রম জোরদার করেছে এলিট ফোর্স র্যাব। ঢাকায় র্যাবের ৬৯টি ও ঢাকার বাহিরে ১৪৯টিসহ সারা দেশে মোট ২১৮টি টহলদল মোতায়েন এবং সাদা পোশাকে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিশেষ নজর রাখা হয়েছে ভার্চুয়াল জগতে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, সন্ত্রাসী নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও অপহরণে জড়িত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে র্যাবের জোরালো তৎপরতা অব্যাহত আছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভার্চুয়াল জগতে যে কোনো ধরনের গুজব-মিথ্যা তথ্য ছড়ানো প্রতিরোধে র্যাব সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত রেখেছে র্যাব। অন্যদিকে, যে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে র্যাবকে জানানোর জন্য সর্বসাধারণকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
পুলিশ সদরদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক ইনামুল হক সাগর বলেন, আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের প্রতিটি সদস্য তাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় চলমান অপারেশন ডেভিল হান্টে ৬৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর বাইরে নিয়মিত মামলা এবং ওয়ারেন্টমূলে আরও ৯৯৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে দুটি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদসহ দেশি অস্ত্র।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) বলছে, জননিরাপত্তা বিধান ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে রাজধানীতে পুলিশি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ডিএমপিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মিলে সমন্বিত চেকপোস্ট ও টহল কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। গত সোমবার রাত ১২টা থেকে ২৪ ঘণ্টায় ডিএমপির ৫০টি থানা এলাকায় ৫০০টি টহল টিম দায়িত্ব পালন করে। একই সঙ্গে নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থানে ৫৪টি পুলিশি চেকপোস্ট পরিচালনা করা হয়। জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির টহল টিমের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধপ্রবণ স্থানে সিটিটিসির সাতটি, এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) এর চারটি এবং র্যাবের ১০টি টহল টিম দায়িত্ব পালন করে। এর বাইরে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট এপিবিএন-এর পক্ষ থেকে ৩১টি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়।
ডিএমপি থেকে আরও জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন অপরাধে জড়িত মোট ২৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছে ১৪ জন ডাকাত, ১৬ জন পেশাদার সক্রিয় ছিনতাইকারী, সাতজন চাঁদাবাজ, ১১ জন চোর, ২২ জন চিহ্নিত মাদক কারবারি, ৪৪ জন পরোয়ানাভুক্ত আসামি। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি ছুরি, চারটি চাকু, একটি প্লায়ার্স, একটি স্ক্রু ড্রাইভার, একটি লোহার শাবল, একটি চাপাতি, একটি দা ও দুটি লোহার রড উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত মাদকের মধ্যে রয়েছে ৪৯ কেজি ৮৭০ গ্রাম গাঁজা ও ৭০৪ পিস ইয়াবা। গত ২৪ ঘণ্টায় ডিএমপির বিভিন্ন থানায় ৫৯টি মামলা রুজু করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতিতে ৯ সিদ্ধান্ত : আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যৌথ বাহিনী গঠন করে টার্গেট এলাকায় জোরদার অপারেশন পরিচালনা, থানাভিত্তিক সন্ত্রাসীদের হালনাগাদ তালিকা করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা, ছিনতাইকারী ও ডাকাত ধরতে কম্বাইন্ড অভিযান পরিচালনাসহ একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটি। সোমবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে কোর কমিটির এই সভা হয়। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।
সিদ্ধান্তগুলো হলো- ১. রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তল্লাশিচৌকি বাড়ানো হবে। অপরাধপ্রবণ এলাকায় টহল সংখ্যা বাড়ানো হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট, বিজিবি সদস্যদের সমন্বয়ে যৌথবাহিনী গঠন করে টার্গেট এলাকায় জোরদার অপারেশন পরিচালনা করা হবে। ২. রাজধানীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে নৌবাহিনীর একটি অতিরিক্ত পেট্রোল এবং কিছু এলাকায় কোস্ট গার্ডের একটি অতিরিক্ত পেট্রোল নিয়োজিত থাকবে। ৩. পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটপ্রধান, উপপুলিশ কমিশনার, সেনাবাহিনীর মাঠে নিয়োজিত ব্রিগেড প্রধান ও অন্যান্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রে সময়ে সময়ে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করবেন। ৪. তাৎক্ষণিকভাবে অলিগলিতে টহল দিয়ে অপরাধীদের পাকড়াও করতে ডিএমপির পুলিশ সদস্য, বিজিবি, আনসার ও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের সদস্যদের জন্য মোটরসাইকেল ক্রয় করা হবে। ৫. ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের সম্ভাব্য অবস্থানস্থলে কম্বাইন্ড অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। ৬. ঢাকা শহরের বাইরে, বিশেষ করে টঙ্গি, বসিলা, কেরানীগঞ্জ এবং মুন্সিগঞ্জ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বাড়ানো হবে। ৭. ৫০০ এপিবিএন সদস্য ডিএমপিতে ন্যস্ত হয়ে পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে। ৮. থানাভিত্তিক সন্ত্রাসীদের হালনাগাদ তালিকা করে তাদের আইনের আওতায় আনতে তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ৯. মিথ্যা, গুজব ও প্রোপাগান্ডার বিপরীতে সত্য তথ্যগুলো প্রচারে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
সভায় অন্যদের মধ্যে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বক্স চৌধুরীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আব্দুল খালিক
আইন-উপদেষ্টা: ব্যারিস্টার ফয়সাল দস্তগীর, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।
উপ-সম্পাদকঃ ফুজেল আহমদ
প্রকাশক কর্তৃক উত্তরা অফসেট প্রিন্টার্স কলেজ রোড, বিয়ানীবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও শরীফা বিবি হাউজ, মেওয়া থেকে প্রকাশিত।
বানিজ্যিক কার্যালয় :
উত্তর বাজার মেইন রোড বিয়ানীবাজার, সিলেট।
ই-মেইল: dailyajkersylhet24@gmail.com
মোবাইল: ০১৮১৯-৫৬৪৮৮১, ০১৭৩৮১১৬৫১২।
শাফিয়া শরীফা মিডিয়া বাড়ীর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান দৈনিক আজকের সিলেট, রেজি নং: সিল/১৫৩