রূপপুর দুর্নীতি মামলার তদন্ত: দুদকের কার্যক্রমে স্থবিরতা গ্রহণযোগ্য নয়
০৩ জানু ২০২৩, ০৮:১৩ পূর্বাহ্ণ


সম্পাদকীয় :
রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুর্নীতি মামলা তদন্তের নামে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) ‘তেলেসমাতি কাণ্ড’ চলছে বলে জানা যায় যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে। ইতোমধ্যে তিন দফায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদলির পর দুর্নীতিতে জড়িত অতিরিক্ত প্রধান, নির্বাহী ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীসহ বেশ কয়েকজনকে বাদ দিয়ে ‘ফরমায়েশি’ চার্জশিট প্রস্তুত করার নকশা আঁকা হচ্ছে, যা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। ২০১৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় পৃথক চারটি মামলা দায়ের করে দুদক। পরে মামলার আসামি হিসাবে ১১ প্রকৌশলীকে গ্রেফতারও করেছিল দুদক। তবে তারা সবাই এখন জামিনে মুক্ত।
উল্লেখ্য, রূপপুরে আলোচিত ‘বালিশকাণ্ডের’ দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছিল ২০১৭-১৮ অর্থবছরে। সেসময় দুর্নীতির ঘটনায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তদন্তে ২৮ প্রকৌশলীর সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিললেও দুদকের অনুসন্ধান শেষে মামলায় আসামি করা হয়েছে ১১ প্রকৌশলীকে। অভিযোগ রয়েছে, শুরু থেকেই মন্ত্রণালয় ও দুদকের অসৎ কিছু কর্মকর্তা তদন্ত ভিন্ন খাতে নিয়ে বেশ কয়েকজন প্রকৌশলীকে রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন। এর প্রমাণ-মন্ত্রণালয়ের তদন্তে ২৮ জন প্রকৌশলীর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে মাত্র ১৬ জনকে। অন্যদিকে দুদকের অনুসন্ধান শেষে করা মামলায় তাদের মধ্যে ৫ জনকে আসামি করা হয়নি। দুর্নীতিতে জড়িত সবার বিরুদ্ধে একই ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ায় মন্ত্রণালয় ও দুদকের ভূমিকা যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।
দুই বছর আগে মামলার তদন্ত শেষ করতে হাইকোর্ট ছয় মাসের সময় বেঁধে দিলেও একের পর এক তদন্ত কর্মকর্তা বদলি হওয়ায় আলোচিত এ মামলার কাজে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হচ্ছে, যা অনভিপ্রেত। প্রশ্ন হলো-ছোট ছোট দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান ও মামলার তদন্ত কাজ নিজস্ব গতিতে চললেও ‘রাঘববোয়াল’দের ক্ষেত্রে দুদকের কার্যক্রমে স্থবিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে কেন? কেবল রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুর্নীতি মামলা নয়; অনেক রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও আমলার দুর্নীতির তদন্তের ক্ষেত্রেও দুদকের কার্যক্রম গতি পাচ্ছে না। তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ায় সাংবিধানিক এ সংস্থার প্রতি মানুষের আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুর্নীতি মামলা ও অন্যান্য মামলার বিচার প্রক্রিয়া আইনি কাঠামোর মধ্যে নির্ধারিত সময়ে শেষ করা জরুরি।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1.1K বার