‘ভারত বিরোধিতার’ অভিযোগে বাংলাদেশিদের হোটেল দেবে না দেশটির ব্যবসায়ীরা

Daily Ajker Sylhet

দৈনিক আজকের সিলেট

২৬ ডিসে ২০২৫, ১২:৪৫ অপরাহ্ণ


‘ভারত বিরোধিতার’ অভিযোগে বাংলাদেশিদের হোটেল দেবে না দেশটির ব্যবসায়ীরা

স্টাফ রিপোর্টার:

বাংলাদেশে বিরাজমান কথিত রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ভারত বিরোধী বক্তব্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছে হোটেল রুম ভাড়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের শিলিগুড়ির প্রভাবশালী সংগঠন ‘বৃহত্তর শিলিগুড়ি হোটেল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি’। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানানো হয়েছে।

হোটেল ব্যবসায়ীদের এই সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এখন থেকে পর্যটন, শিক্ষা কিংবা চিকিৎসা—কোনো উদ্দেশ্যেই আসা কোনো বাংলাদেশিকে তাদের সদস্যভুক্ত হোটেলগুলোতে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হবে না। শিলিগুড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন ও ব্যবসায়িক কেন্দ্রে এমন সিদ্ধান্ত দুই দেশের সাধারণ মানুষের যাতায়াতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বৃহত্তর শিলিগুড়ি হোটেল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির জয়েন্ট সেক্রেটারি উজ্জ্বল ঘোষ সংবাদমাধ্যমকে জানান, মূলত ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকেই তাদের সংগঠনের সদস্যরা বাংলাদেশিদের কাছে হোটেল ভাড়া দেওয়া বন্ধ রাখার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে এতদিন পর্যন্ত মানবিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং চিকিৎসার জন্য আসা অসুস্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল রাখা হয়েছিল।

কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে কথিত সহিংসতা এবং ভারত বিরোধী মনোভাব ক্রমাগত বাড়তে থাকায় তারা এখন থেকে পূর্ণাঙ্গ নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উজ্জ্বল ঘোষের দাবি অনুযায়ী, তাদের সংগঠনের অধীনে থাকা ১৮০টি হোটেল এই কঠোর নির্দেশনা মেনে চলবে।

শিলিগুড়ির স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে যে, শুধু এই সংগঠনের ১৮০টি হোটেলই নয়, বরং সংগঠনের বাইরে থাকা আরও প্রায় ৫০টি হোটেলও বর্তমানে বাংলাদেশিদের কাছে কক্ষ ভাড়া দিচ্ছে না। ফলে শিলিগুড়ি শহরে বাংলাদেশিদের জন্য থাকার জায়গা পাওয়া এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি পর্যটক নেপাল ও ভুটানে যাওয়ার ট্রানজিট হিসেবে কিংবা শিলিগুড়ির উন্নত চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে সেবা নিতে সেখানে যাতায়াত করেন। ব্যবসায়ীদের এই আকস্মিক ও গণ-নিষেধাজ্ঞার ফলে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে আসা সাধারণ মানুষ এবং অভিভাবকহীন শিক্ষার্থীরা।

টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, শিলিগুড়ি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হওয়ায় এখানে পর্যটন ও হোটেল ব্যবসা মূলত বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। ব্যবসায়ীদের এমন কট্টর অবস্থান স্থানীয় অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলেও অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন।

তবে হোটেল মালিকদের দাবি, জাতীয় স্বার্থ এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে তাঁরা এই ব্যবসায়িক ক্ষতির ঝুঁকি নিতেও প্রস্তুত। এই সিদ্ধান্তের ফলে দুই দেশের মধ্যকার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক এবং সাধারণ মানুষের যাতায়াতে এক বড় ধরনের দেয়াল তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 999 বার