বিয়ানীবাজারের শেষ ঠিকানা- ‘কবর খোঁড়াই যাদের নেশা’
২২ মার্চ ২০২৫, ০৪:৩৯ অপরাহ্ণ


স্টাফ রিপোর্টার:
পরপারের প্রথম স্টেশন হচ্ছে কবর। মৃত মানুষকে সেখানে চিরন্দ্রিায় দাফন করা হয়। এই কবরকে ঘিরে পরকালের অনেক অন্তর্নিহিত কথা ইসলামে প্রচলিত আছে। মৃত মানুষের দাফন কার্যের শেষ বিছানা এটি। এলাকার কারও মৃত্যুর খবর পেলেই তড়িঘড়ি করে খুন্তি-কোদাল, দা, চাকু, স্কেল আর করাতসহ কবর খোঁড়ার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে মৃত ব্যক্তির বাড়িতে ছুটে যান ১০-১২জনের তরুণ দল। কবর খোঁড়ার পর মৃত ব্যক্তির পরিবারের কারও কাছ থেকে নেন না পারিশ্রমিক বা যাতায়াত খরচ। এলাকার সবার কাছে বিশেষ সম্মানের পাত্র তারা। পরিচিতি পেয়েছেন শেষ ঠিকানার কারিগর হিসেবে। কবর খোঁড়ার নিখুঁত, সুদক্ষ এবং সুনিপুণ কারিগর হিসেবে তারা সর্বত্র পরিচিতি পেয়েছে।
কবর খোঁড়ার এমন আত্মিক কাজে তৃপ্ত হয়ে তারা বিয়ানীবাজার পৌরশহরের কসবা-খাসা গ্রামে গড়ে তুলেছেন ‘শেষ ঠিকানা’ নামের একটি সংগঠন। বর্তমানে এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ৫০ এর কাছাকাছি। একদিনে একাধিক কবর খোঁড়ার প্রয়োজন হলে তারা কয়েকটি গ্রæপে বিভক্ত হয়ে যান। মৃত ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে বাঁশ কাটা থেকে শুরু করে কবর খোঁড়া শেষ করে দাফন পর্যন্ত সেখানে থাকেন তারা। সংগঠনের ডায়রীতে লেখা তথ্য অনুযায়ী, তারা এ পর্যন্ত ৪ হাজারের উপর কবর খোঁেড়ছেন। শুধু দুই গ্রামেই নয়, পৌরশহরের বিভিন্ন এলাকায় মৃত্যুর খবর শুনলে তারা ছুটে যান। সংগঠনের সদস্যদের নিয়মিত চাঁদায় তারা মৃতের প্রচারের জন্য মাইকসেট ক্রয় করেছেন। আয় বাড়ানো কিংবা দূর-দূরান্তে যেতে একটি সিএনজি অটোরিক্সা ক্রয় করতে চান তারা।
গ্রামবাসী জানান, শেষ ঠিকানার সদস্যরা এতদঞ্চলের মানুষর হৃদয় জয় করেছেন। তারা দৈনন্দিন কাজ ফেলে মৃত মানুষকে চিরশয্যায় শায়িত করার কাজ করছেন। চাহিদাবিহীন এই সংগঠনের সদস্যদের নীতি-নৈতিকতা মুগ্ধ করে এলাকার সবাইকে। প্রায় ১০ বছর থেকে শেষ ঠিকানার সদস্যরা এলাকায় কবর খোঁড়ার কাজ করছেন। রাত-দিন যেকোন সময় তারা কবর খুঁড়তে বের হন। আবহাওয়া যেমনই থাকুক সামাজিক এই দায়িত্বের দায় নিয়ে তাদের কর্ম চলে বিরামহীন।
সংগঠনের সভাপতি ছরওয়ার আলম জানান, আমাদের টাকা-পয়সার কোনো লোভ নেই। কবর খুঁড়ে কারো কাছ থেকে হাদিয়া বা টাকা পয়সা নেয়া হয়না। এমনকি অনুষ্ঠানেও খেতে যাই না। মৃত ব্যক্তির কবর খোঁড়া আমাদের নেশা হয়ে গেছে।
শেষ ঠিকানার সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমদ বলেন, শখের বশে কবর খুঁড়তে খুঁড়তে এখন এটা নেশা হয়ে গেছে। কোথাও মানুষ মারা যাওয়ার খবর পেলেই মনটা ছটফট করে। দ্রæত খুন্তি-কোদাল, দা, চাকু, স্কেল আর করাতসহ কবর খোঁড়ার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে মৃত ব্যক্তির বাড়িতে ছুটে যাই।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 987 বার