বিগত সরকার জনগণের আমানত নিজেদের পকেটে লুকিয়েছেন: জামায়াত আমির

Daily Ajker Sylhet

দৈনিক আজকের সিলেট

৩০ ডিসে ২০২৪, ০৩:৪৫ অপরাহ্ণ


বিগত সরকার জনগণের আমানত নিজেদের পকেটে লুকিয়েছেন: জামায়াত আমির

দিনাজপুর ও বীরগঞ্জ প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, যারা বিভিন্ন সময়ে দেশ শাসন করেছেন, তারা জনগণের আমানত রক্ষা করেন নাই। তারা জনগণের আমানত নিজেদের পকেটে লুকিয়েছেন, দেশের সম্পদ তসরুপ করেছেন। সেই সম্পদ তারা দেশের বাইরে পাচার করেছেন। বিগত সাড়ে ১৫ বছরে ২৬ লাখ কোটি টাকা বাংলাদেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে। আগে টাকা পাচার করেছেন-পরে যেখানে পাচার করেছেন সেখানে তারা পালিয়ে হাজির হয়েছেন। ক্ষমতার শেষ দিন পর্যন্ত তারা মানুষ খুন করেছেন।

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় দিনাজপুরের বীরগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এদেশের ছাত্র-জনতা আন্দোলন করেছে, জীবন দিয়েছে, তাদের আমরা সম্মানিত করতে চাই।

তিনি বলেন, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই-যে বাংলাদেশে কোন বৈষম্য থাকবে না, ভেদাভেদ থাকবে না। এমন একটি রাষ্ট্র চাই-যে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হবে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। দেশের যেসব মানুষের সামর্থ থাকবে না, তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেবে এই রাষ্ট্র। এদেশে কোন পথশিশু থাকবে না। সব পথশিশুর দায়িত্ব নেবে সরকার। এমন একটি রাষ্ট্র চাই যেখানে অফিস, আদালত, কোর্ট, কাচারি-কোথাও ঘুস বাণিজ্য থাকবে না, যেখানে কোন চাঁদাবাজ ও দখলদারিত্ব থাকবে না। আমাদের মা বোনেরা তাদের ইজ্জতের সঙ্গে বসবাস করবে। আমরা একটি মানবিক বাংলাদেশ চাই-যে বাংলাদেশে প্রত্যেকটি মানুষ প্রত্যেকটি মানুষকে শ্রদ্ধা করবে। এমন বাংলাদেশ যদি আপনারা চান-তাহলে দরকার আপনাদের অকুন্ঠ সমর্থন ও ত্যাগ-তিথিক্ষা।

শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ড উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা বাংলাদেশে এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা চাই-যেই শিক্ষা ব্যবস্থা হবে নৈতিকতার ভিত্তিতে। শিক্ষাগ্রহন করে আমাদের সন্তানেরা ডাকাত হবে না। ডাকাত তৈরির শিক্ষার পরিবর্তে মানুষ তৈরির শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। প্রকৃত শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে প্রকৃত মানুষ গড়ে তোলে সেই প্রকৃত মানুষের প্রতি দেশ পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দিতে হবে।

জামায়াত আমির বলেন, ‘দেশের প্রতি যাদের ভালোবাসা আছে, দরদ আছে তারা কখনো দেশ ছেড়ে পালায় না। বিগত দিনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ ১১ জন নেতাকে আওয়ামী লীগ খুন করেছে, বিচারিক আদালতের নামে তাদেরকে হত্যা করেছে। ১১ জনের একজনও বাংলাদেশ থেকে পালায়নি, পালানোর চেষ্টা করেননি। মীর কাসিম বাইরে ছিলেন তিনিও ফেরত এসেছেন এবং আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা।’

শফিকুর রহমান বলেন, ‘পৃথিবীর মানচিত্রে অপার সম্ভাবনাময় ছোট একটি দেশ বাংলাদেশ। এখানে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানসহ সব ধর্মের ভাই-বোনেরা যুগযুগ ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আর ভালোবাসা নিয়ে বসবাস করছি। কিন্তু মাঝে মাঝে কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে বাংলাদেশের সম্প্রতি নষ্ট করতে চায়। সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু, স্বাধীনতা পক্ষে-বিপক্ষে দুটি শক্তিতে ভাগ করতে চায়। দুনিয়ার ইতিহাসে এমন কোন উদাহারণ নেই কোন জাতি বিভক্ত হয়ে সম্মানিত এবং মর্যাদা লাভ করেছে এবং তারা উন্নতির শিখরে উঠেছে। বরঞ্চ বিভক্ত জাতি বিশৃঙ্খল থাকে। ওই বিভক্তি আমাদের সর্বনাশ করেছে। আমরা এই বিভক্তির কবর রচনা করতে চাই। এখন যারা এই বিভক্তিকে জিইয়ে রাখতে চেষ্টা করবে তারা কার্যত জনগণের মুখোমুখি দাঁড়াবে। আমাদের এখন প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে দেশ এবং জাতির স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

১৭ বছর বয়সিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছর নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রতিবাদ করেছেন কিন্তু স্বৈরাচারী সরকারের আমরা পতন ঘটাতে পারি নাই। আমাদের ছেলে মেয়েদের নেতৃত্বে তা সম্ভব হয়েছে। অগ্রভাগে তারাই ছিল এটা আমাদের গর্বের। প্রধান উপদেষ্টা ১৭ বছর বয়সিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছেন। কেউ কেউ এটা মানতে চান না। আমরা বলি রাস্তায় নেমে যারা স্বাধীনতা এনেছে তারা বুক পেতে দিয়ে দিয়েছে তাদেরকে অবশ্যই ভোটার করতে হবে। যারা বুক পেতে দিয়ে স্বাধীনতা এনে দিতে পারে আমরা ভোটের অধিকার দিতে পারি না?

গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে জামায়াত আমির বলেন, ‘আগে মানুষ ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে ছিল। মুখ দিয়ে কথা বলতে পারত না। স্বস্তির সঙ্গে নিজের জীবন নিয়ে চলাফেরা করতে পারত না। এখন মানুষ স্বস্তির সঙ্গে সব পারে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বললেই মানুষের জীবনে বিভীষিকাময় শাস্তি নেমে আসত। সাধারণ মানুষ এবং মিডিয়ার ভাইয়েরা নির্দ্বিধায় এখন খবর পরিবেশন করতে পারে। তবে মাঝে মাঝে মিডিয়ার ভাইয়েরা ওলট-পালট করে ফেলে।

সৈয়দপুরে এক সভায় দেওয়া বক্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওই সভায় আমি বলেছিলাম, যাদি বাংলাদেশে কুরআনের সমাজ কায়েম হয় তাহলে সেই সমাজে মায়েদেরকে মায়ের মর্যাদা দেওয়া হবে। তারা গর্বের সঙ্গে ইজ্জতের সঙ্গে এদেশে বসবাস করবে। তারা সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। জোর করে আমরা কাউকে পোশাক পড়াব না। আমরা এমন শিক্ষা ও রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলব প্রত্যেকটি মা শালীন ও মার্জিত পোশাক পরে গর্ববোধ করবেন। অথচ একটা টেলিভিশন চ্যানেল খবর করেছে জামাতের আমির বলেছেন মেয়েরা ইচ্ছামত পোশাক পরিধান করবেন। সংবাদ মাধ্যমকে বলা হয় জাতির বিবেক ও জাতির আয়না। আমাদের অনুরোধ সাদাকে সাদা বলতে হবে কালোকে কালো বলতে হবে। যদি আমিও কালো হই তাহলে কালোই বলবেন আমাকে ছাড় দেবেন না।’

বীরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির ক্বারী আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে পথসভায় বক্তব্য রাখেন-কেন্দ্রীয় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও মাওলানা আবদুল হালিম, দিনাজপুর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাদ্দিস ড. এনামুল হকসহ প্রমুখ।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 987 বার