ফেব্রুয়ারিতে সারা দেশে বিএনপির কর্মসূচি

Daily Ajker Sylhet

দৈনিক আজকের সিলেট

২৯ জানু ২০২৫, ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ


ফেব্রুয়ারিতে সারা দেশে বিএনপির কর্মসূচি

স্টাফ রিপোর্টার:
আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং দ্রুততম সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে ফেব্রুয়ারিতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি। এ লক্ষ্যে ঢাকাসহ সারা দেশে দুই ধাপে সমাবেশ করার পরিকল্পনা করেছে দলটি। খুব শিগগিরই কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে কর্মসূচির দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে। সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এছাড়া বৈঠকে ছাত্রদের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের খসড়ার ওপর পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে বলা হয়, ছাত্ররা বিএনপির কাছে ঘোষণাপত্রের যে খসড়া পাঠিয়েছে, সেটা নিয়ে বিএনপি নেতারা আলোচনা করেছেন। এই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন নিয়ে বিএনপির প্রশ্ন থাকলেও ছাত্রদের এই উদ্যোগকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করতে চায় না দলটি। সে কারণে ছাত্রদের প্রস্তাবিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগকে সম্মান জানিয়ে বাস্তবতার নিরিখে খসড়ায় প্রয়োজনীয় সংস্কার ও পরিবর্তন আনার কাজ শুরু করেছে দলটি।

আরও জানা গেছে, বৈঠকে নেতারা বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্রুত নির্বাচনের বিকল্প নেই। বিগত দেড় দশকে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে। জনগণ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তিনটি সংসদ নির্বাচনে জনগণ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেনি। এখন সংস্কারের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য যত দ্রুত সম্ভব সরকার ও জনগণকে নির্বাচনমুখি করা। নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপে রাখতে হবে। এছাড়া প্রতিবছর রমজানকে কেন্দ্র করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। এতে জনগণ দিশেহারা হয়ে পড়েন। মার্চের শুরুতেই রমজান শুরু, দ্রব্যমূল্য নিয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করে ফেব্রুয়ারিতেই কর্মসূচি পালন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন নেতারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ফেরত আনতেই বিএনপি আবার মাঠে নামছে। বিএনপি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে রাজনীতি করে। তাদের ভোটাধিকার আদায়সহ সুষ্ঠু নির্বাচন ও রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বিএনপি কর্মসূচি পালন করবে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কর্মসূচি চূড়ান্ত করবেন কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় নেতারা। মূলত রমজান শুরুর আগেই এই কর্মসূচি পালিত হবে। রমজান শেষ হলে পরিস্থিতির আলোকে তখন নতুন কর্মসূচিও আসতে পারে।

গত কয়েক মাস ধরে নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। এমনকি চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন করা সম্ভব বলেও মনে করছেন দলটির শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা। তাদের মতে, সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে যে কোনো সময় নির্বাচন হতে পারে। এক্ষেত্রে দলটির মত- আগামী বছরের জুন পর্যন্ত নির্বাচনের জন্য ‘খুবই অতিরিক্ত সময়’। ন্যূনতম সংস্কার করে জুলাই-আগস্টেই একটি অবাধ-সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব। যদি সেটি সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন করা যেতে পারে।

স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্র আরও জানায়, বিএনপি নেতারা মনে করেন, বাহাত্তরের সংবিধান যে মূলনীতির ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে, সেই মূলনীতি স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে পাওয়া। সে ক্ষেত্রে বাহাত্তরের সংবিধান বাতিলের কোনো সুযোগ নেই। সেখানে যদি কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা সংশোধন প্রয়োজন হয়; সেটা করা যেতে পারে। তাই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির ছাত্রনেতারা ঘোষণাপত্রে বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল করার যে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন, সেটি যুক্তিসঙ্গত নয় বলে মনে করে বিএনপি। দলটির অভিমত, মহান মুক্তিযুদ্ধই হবে বাংলাদেশের ভিত্তি। এরপরে বাংলাদেশের আরও অনেক অর্জন রয়েছে। ঘোষণাপত্রে সেগুলোরও প্রসঙ্গ থাকবে। এছাড়া গণতন্ত্রের জন্য গত ১৭ বছরে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যে সংগ্রাম, ত্যাগ-ঘোষণাপত্রে সেগুলোও সংযুক্ত করবে দলটি।

জানা গেছে, ছাত্রদের প্রস্তাবিত খসড়া ঘোষণাপত্রকে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় মডিফাই (সংশোধন) করেছে বিএনপি। জরুরিভিত্তিতে আবারও স্থায়ী কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে এগুলো চূড়ান্ত হবে। এরপর সংশোধনকৃত খসড়া নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া শরিকদেরও মতামত নেওয়া হবে। পরবর্তী সময়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রণয়ন নিয়ে সরকার আলোচনায় ডাকলে শরিকদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তৈরিকৃত খসড়া দেবে বিএনপি।

ছাত্রদের খসড়া ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, এটি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে। তবে এটা এভাবে দেওয়ার কোনো সুযোগ আছে বলে মনে করে না বিএনপি। দলটির অভিমত- গণ-অভ্যুত্থানের প্রায় ৬ মাস হতে চলেছে। এখন ব্যাকডেট ধরে এটা ঘোষণা করা হাস্যকর হবে। তাই এটা প্রোক্লেমেশন নয়, গণ-অভ্যুত্থানের ডিক্লারেশন হতে পারে। আর রাজনৈতিক মতৈক্যের ভিত্তিতে এটা ঘোষণা করা হবে; সেক্ষেত্রে কোনো ব্যাকডেটের প্রয়োজন নেই।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 986 বার