পিলখানা হত্যা : চলতি বছরেই চূড়ান্ত আপিল শুনানি

Daily Ajker Sylhet

দৈনিক আজকের সিলেট

২৫ ফেব্রু ২০২৩, ১২:৫১ অপরাহ্ণ


পিলখানা হত্যা : চলতি বছরেই চূড়ান্ত আপিল শুনানি

স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে সেনা কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের ১৪ বছর পেরিয়ে গেছে। মামলার এখনও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের রায় কার্যকর করতে চূড়ান্ত আপিল শুনানির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এবং যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের খালাস চেয়ে করা আপিল ও মৃত্যুদণ্ড বহাল চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল এখন সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন। আপিল চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়ায় আসামিদের সাজা কার্যকর করা যাচ্ছে না।

তবে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন জোর দিয়ে বলেছেন, চলতি বছরেই আলোচিত এ মামলার শুনানি শুরু হবে ও মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমরা আশা করছি এই বছরই এই মামলাটির শুনানি করতে পারব। গতবছর আমরা চেষ্টা করেছিলাম। আসামিপক্ষ মামলার আপিলের সারসংক্ষেপ জমা না দেওয়ায় আমরা শুনানি শুরু করতে পারিনি। তাদের সারসংক্ষেপ জমা দেওয়ার জন্য আমরা আবেদন করেছি। আদালতের কাছে চাইব তাদের যেন একটা সময় দেওয়া হয়। ওই সময়ের মধ্যে তারা যদি আপিলের সারসংক্ষেপ না দেন তাহলে আদালত যেন আসামিপক্ষের আবেদন ডিসমিস করে দেন সেই আবেদন করব।

এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, শুরু হওয়াটা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে, আদালতের ওপর নির্ভর করে। আর গত বছর না হওয়ার পেছনে কারণ হলো গত বছর এই মামলাটির শুনানির জন্য পর্যাপ্ত বিচারক ছিলেন না। এখন আপিল বিভাগে যেহেতু আটজন বিচারক আছেন, আশা করি এটার শুনানি হবে ও এ বছরই চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম বলেন, আশা করছি এক মাসের মধ্যে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিতে পারব। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে সারসংক্ষেপ জমা দিতে আপিলকারীদের নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বাদে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডিত অনেকের সাজাভোগ শেষ হয়েছে। কিন্তু বিস্ফোরক মামলার বিচার শেষ না হওয়ায় তারা কারামুক্তি পাচ্ছেন না। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ দেখিনি। হত্যা মামলা থেকে ২৬৯ জন আসামি বিভিন্নভাবে খালাস পেয়েছেন। এই মামলায় দেড়শর মতো আসামিকে ১০ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে তাদের সাজা শেষ হয়েছে। ফলে এখন ৩০০ জনের মতো মানুষ কারামুক্তির অপেক্ষায়।

তিনি আরও বলেন, আজ ১৪ বছর ধরে এই আসামিদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মামলা থাকার কারণে তারা মুক্তি পাচ্ছেন না। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলাতে ১২৬৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ২০০ জন সাক্ষীকে তারা আদালতে উপস্থিত করতে পেরেছেন। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আমরা প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানাই।

পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে সেনা কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের মামলায় ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি নিম্ন আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১৫২ জনের মধ্যে ডিএডি তৌহিদসহ ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম বড় এ মামলায় ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার রায় প্রকাশ করা হয়।

রায়ে বিচারিক মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আট আসামিকে যাবজ্জীবন ও চারজনকে খালাস দেন আদালত। একইসঙ্গে বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়। বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন পাওয়া আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড নেতা তোরাব আলীসহ ১২ জনকে খালাস দেন আদালত।

বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিশেষ হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।

এছাড়া বিচারিক আদালতে তিন থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ২৫৬ আসামির মধ্যে ১০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ১২৮ জন। এছাড়া আটজনকে সাত বছর, চারজনকে তিন বছর এবং দুইজনকে ১৩ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর ২৯ জন খালাস পান। পাশাপাশি ২৮ জন আপিল করেনি। তিনজন মারা গেছেন।

এদিকে বিচারিক আদালতে খালাস পাওয়া ৬৯ জনের মধ্যে ৩১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও চারজনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। এছাড়া ৩৪ জনকে খালাস দেওয়া হয়। দুই দিনব্যাপী উপমহাদেশের মধ্যে বৃহত্তম এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।

২০১৫ সালে এ মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানির জন্য বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করা হয়।

এই বেঞ্চে ৩৭০ কার্যদিবসে আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানি হয়। ওই সময়ের অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমসহ বিভিন্ন আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেন।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে মামলা দুইটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। বিচার হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ সংলগ্ন অস্থায়ী এজলাসে।

বিচার শেষে ঢাকা মহানগর তৃতীয় বিশেষ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে বিডিআরের সাবেক ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু (প্রয়াত) ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২৭৭ জনকে খালাস দেওয়া হয়। এ ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলাটি এখনো নিম্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

 

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার