পাতাল রেল নির্মাণের চ্যালেঞ্জ, এখনই পুনর্মূল্যায়ন করা দরকার

Daily Ajker Sylhet

দৈনিক আজকের সিলেট

০৫ জানু ২০২৫, ০৩:৪৮ অপরাহ্ণ


পাতাল রেল নির্মাণের চ্যালেঞ্জ, এখনই পুনর্মূল্যায়ন করা দরকার

উপ-সম্পাদকীয়:
দেশের প্রথম পাতাল রেল বা মেট্রোরেল প্রকল্প-১ এর নির্মাণকাজ ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরিতাপের বিষয়, এ নির্মাণকাজ এখন বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। শনিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, মূল কাজ শুরুর আগে পরিষেবা স্থানান্তরের সময়েই যানজটে স্থবির হয়ে পড়ছে বিমানবন্দর থেকে প্রগতি সরণি। ফলে তীব্র যানজটে নাকাল হচ্ছে মানুষ। ৫ থেকে ১০ মিনিটের দূরত্ব পাড়ি দিতে ঘণ্টা পার হয়ে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিষেবা স্থানান্তরের পর মেট্রো স্টেশন নির্মাণ শুরু হলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আরও কঠিন হবে। জানা গেছে, কুড়িল থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণের কথা থাকলেও এর কোনো কূলকিনারা করা যাচ্ছে না। ভূ-গর্ভস্থ টানেল নির্মাণকাজ চলার সময় সড়ক দেবে যাওয়া ও আশপাশের ভবন হেলে পড়ার মতো ঝুঁকিও রয়েছে। তখন পুরো করিডরের চলাচল বন্ধ করা ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবে না। কাজেই এ প্রকল্প এগিয়ে নেওয়া উচিত হবে কিনা, এখনই তার পুনর্মূল্যায়ন করা দরকার। নয়তো আরও বিলম্ব হলে সময় ও ব্যয় বহুলাংশে বাড়বে। তখন ভয়াবহ রূপ নেবে মানুষের দুর্ভোগ।

এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত সড়কটি খুবই ব্যস্ত। এর দুপাশে সড়ক লাগোয়া দুর্বল কাঠামোর শত শত বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে। সাধারণত এ ধরনের সড়কে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ নিয়ে কোনো দেশ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে না। বাংলাদেশের নিকটবর্তী দেশ ভারত ১৯৮৪ সালে কলকাতায় পাতাল মেট্রোরেল তৈরি করেছে। কাজ শুরুর সময় বহুমুখী জটিলতায় একপর্যায়ে তারা কাজ বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তাও করেছিল। পরে অনেক জটিলতা ও দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে কাজ শেষ করে। তাই আমাদের দেশে এমআরটি-১-এর পাতাল মেট্রোরেল নির্মাণ করিডরে শঙ্কা মোকাবিলায় সতর্কতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আর তা করতে হলে খরচ বাড়বে। অতিরিক্ত খরচ হলে তা উঠে আসা কঠিন হবে। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতেই পারে, এমআরটি-১ প্রকল্প বাস্তবায়নে সাশ্রয়ী ও স্বস্তির উন্নয়ন হবে, নাকি হবে শ্বেতহস্তীর উন্নয়ন? কারণ টেকসই উন্নয়নের শর্ত হলো কম খরচে উন্নয়ন কাজ করা। কাজেই এ উন্নয়ন কাজকে পরিকল্পিত উপায়ে বেগবান করা না গেলে খরচ যেমন বাড়বে, তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যসহ জীবনযাত্রাতে পড়বে এর বিরূপ প্রভাব।

প্রকল্পটি যদি অব্যাহত রাখা হয়, তাহলে যানবাহনের বেপরোয়া চলাচল এবং যত্রতত্র প্রকল্পের নির্মাণসামগ্রী রাখা বন্ধে ট্রাফিক পুলিশকে উদ্যোগী হতে হবে। ঢাকা ওয়াসা, বিদ্যুৎ বিভাগসহ যেসব সংস্থার সংযোগ স্থানান্তর করা হচ্ছে, তা যেন পরিকল্পিত উপায়ে হয়, সে ব্যাপারে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে আরও মনোযোগী হতে হবে। বলা বাহুল্য, প্রকল্পটি চালু হলে উভয় রুটে দৈনিক ৮ লাখ যাত্রী চলাচল করতে পারবে। এতে যেমন অধিকসংখ্যক যাত্রী পরিবহণ করা সম্ভব হবে, তেমনি যানজটে ভোগান্তি এড়াতে পারায় যাত্রীদের সময়ও অনেক বাঁচবে। ছোট ছোট যানবাহনের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় হ্রাস পাবে। অর্থাৎ প্রকল্পটি ঢাকা মহানগরীর জীবনযাত্রায় ভিন্নমাত্রা যোগ করবে। নগরবাসীর জনজীবনের স্বার্থেই প্রকল্পের খরচ না বাড়িয়ে সার্বিক কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট হবে, এটাই প্রত্যাশা।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 986 বার