দেশে বেড়েই চলেছে নৃশংস হত্যাকাণ্ড
০৭ ডিসে ২০২৪, ০২:১৯ অপরাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার:
৪ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল ৫ নম্বর সেক্টরসংলগ্ন লেকপাড় এলাকা থেকে ফতুল্লার ডায়িং ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন মাসুমের (৬২) সাত টুকরা লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি ফতুল্লার কাঠেরপুল চাঁদ ডায়িং ও নিট কম্পোজিট গার্মেন্টের মালিক।
এ ঘটনায় মাসুমের প্রেমিকা রুমা আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ বলছে, অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় রাগ ও ক্ষোভ থেকে গত ১০ নভেম্বর রাতে রুমা রাজধানীর শ্যামলীর একটি বাসায় ডেকে নেন মাসুমকে। সেখানে দুধের সঙ্গে নেশাজাত দ্রব্য মিশিয়ে তাকে খাওয়ানো হয়। এতে অচেতন হয় মাসুম। এরপর চাপাতি ও হ্যাক্সোব্লেড দিয়ে হত্যা ও খন্ডবিখন্ড করা হয় মাসুমের মরদেহ। পরে পূর্বাচল এলাকায় এনে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেওয়া হয়। আমরা হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করেছি।
গত ৩০ নভেম্বর মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের সমসপুর এলাকার দোগাছি সার্ভিস সড়ক থেকে শাহিদা আক্তার (২২) নামে এক তরুণীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারের সময় ওই তরুণীর লাশের পাশে কয়েকটি গুলির খোসা পড়ে ছিল। নিহতের শরীরে আটটি গুলির চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের মা জরিনা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে শ্রীনগর থানায় হত্যা মামলা করেন।
পুলিশ বলছে, প্রেমঘটিত কারণে শাহিদাকে হত্যা করা হতে পারে। নিহতের মা বলছেন, ঢাকার ওয়ারী এলাকার তৌহিদ নামের এক ছেলের সঙ্গে তার মেয়ে শাহিদার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তৌহিদ ছেলে হিসেবে ভালো ছিল না। তৌহিদই তার মেয়েকে খুন করেছে।
গত ১০ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট থানার ভাড়ারিফৌদ গ্রাম থেকে নিখোঁজের সাত দিন পর পাঁচ বছর বয়সী শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গ্রামের বাড়ির পাশের পুকুর থেকে শিশুটির হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতের বাবা শামীম আহমদ কানাইঘাট থানায় একটি মামলা করেন। পুলিশ বলছে, শিশুটির মরদেহ দড়ি দিয়ে বেঁধে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছিল। এ ঘটনায় গৃহশিক্ষিকা শামীমা বেগম মার্জিয়াসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করে মার্জিয়া বলেছে, তাকে গৃহশিক্ষক থেকে বাদ দেওয়ায় ক্ষোভ থেকে মুনতাহাকে গলা টিপে ও বস্তাচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। এর আগে ৩ নভেম্বর বিকালে বাড়ি থেকে অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে শিশুটি নিখোঁজ হয়। এ নিয়ে ফেসবুকে বেশ আলোচনা চলছিল। শিশুটিকে উদ্ধারে পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল পরিবারসহ কয়েকজন প্রবাসী।
এভাবে হঠাৎ দেশে বেড়ে গেছে নৃশংস, রোমহর্ষক খুনের ঘটনা। আপনজনরাও ঘটাচ্ছে অবিশ্বাস্য এসব ঘটনা। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক দ্বন্দ্বই অধিকাংশ খুনের কারণ। হঠাৎ হত্যাকান্ডের ঘটনায় বীভৎস, রোমহর্ষক ও নৃশংসতার ঘটনা কেন ঘটছে সে বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। তদন্তে উঠে এসেছে নৃশংস, নিষ্ঠুর, বীভৎস খুনের নেপথ্যের কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম পরকীয়া, জমিসংক্রান্ত বিরোধ ও মাদকের অর্থ জোগাড়। ইন্টারনেটের অপব্যবহার. অসহিষ্ণুতা, অতিমাত্রার ক্ষোভ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণেও মানুষের মাঝে দিনদিন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে নিষ্ঠুরতা। তুচ্ছ কারণে অসহিষ্ণু হয়ে খুনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। তবে বীভৎস বিকৃত খুনের ঘটনার বেশির ভাগই ঘটছে আপন অপেশাদার খুনিদের মাধ্যমে।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, কখনো অপরাধের মাত্রা বাড়ে, আবার কখনো কমে। নৃশংস খুনের ঘটনা বাড়ার পেছনে প্রতিশোধ ও জিঘাংসাসহ বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়া, আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, ইন্টারনেটের অপব্যবহার অন্যতম হতে পারে। যেসব খুনের ঘটনা ঘটছে পুলিশ তা তদন্ত করে অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসছে। অপরাধের মাত্রা কমিয়ে আনতে পুলিশ সর্বদা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। এর মধ্যে কমিউনিটির সঙ্গে সভা-সমাবেশ, ওপেন হাউস ডে, সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি গ্রহণ ইত্যাদি। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, কয়েক মাস ধরে নৃশংস ও রোমহর্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনায় দেখা গেছে, এদের বেশির ভাগই পিটিয়ে, গুলি করে বা কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ব্যক্তিগত, সামাজিক বা রাজনৈতিক কোনো কারণে ক্ষোভ থেকে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে নৃশংসভাবে খুন করছে। হিংসাত্মক এতটাই যে একাধিক গুলি করে, আগুনে পুড়িয়ে বা কুপিয়ে ছিন্নভিন্ন করছে শরীর। যার মনে যত বেশি ক্ষোভ, তার দ্বারা হত্যাকান্ডে নৃশংসতা তত বেশি হয়। থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র দিয়েও নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটাচ্ছে। মানুষের এসব ক্ষোভ প্রশমিত করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পুলিশকে সামাজিক বা আইনগতভাবে উদ্যোগ নিয়ে মানুষের এসব ক্ষোভ দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 998 বার