তারেক রহমান ফিরলেন, এরপর কী?

Daily Ajker Sylhet

দৈনিক আজকের সিলেট

২৭ ডিসে ২০২৫, ১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ


তারেক রহমান ফিরলেন, এরপর কী?

স্টাফ রিপোর্টার:
১৭ বছর পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরলেন। এখন তিনি কী করবেন? তিনি যে বলেছেন, আই হ্যাভ আ প্ল্যান, তার সেই পরিকল্পনাটাই বা কী? তা কিভাবে বাস্তবায়ন করবেন তিনি?

বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন তারেক রহমানকে ‘বিরোধীদের’ প্রবল রাজনৈতিক বিরোধিতার মুখে পড়তে হবে। তিনি দেশে ফেরায় বিএনপি যেমন আরো শক্তিশালী হবে, তেমনি তাকে বিএনপির অতীতের কাজের সমালোচনাও আরো প্রবলভাবে নিতে হবে। নির্বাচনে এখন আর আওয়ামী লীগ কোনো প্রকাশ্য পক্ষ নয়। তাই শুধু আওয়ামী লীগের দুর্নীতি আর অপশাসনের কথা বলেই পার পাওয়া যাবে না বলেও মনে করেন তারা।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেছে যে, দলের জন্য এবং যদি বিএনপি সরকারে যেতে পারে, তাহলে দেশ পরিচালনার বিষয়েও তারেক রহমানের সুনির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা আছে।

তিনি নির্বাচনের আগেই দলের নেতা-কর্মীদের তার সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত করতে চান। তবে এখনই সেগুলো প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে না। তারেক রহমান রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করলে তা স্পষ্ট হতে শুরু করবে বলে মনে করেন তারা।

তারেক রহমান গুলশান অ্যাভিনিউর যে বাড়িতে উঠেছেন, সেখানে নজিরবিহীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশের বাড়ি ‘ফিরোজায়’ থাকেন তার মা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি এখন এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধানী। এই দুইটি বাড়িকে একই নিরাপত্তার ছাতায় আনা হয়েছে। দুই দিকের সড়ক পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছে। সরকারি নিরাপত্তা ছাড়াও বিএনপির নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে।

তারেক রহমানের শুক্রবার ও শনিবারের কর্মসূচি প্রকাশ করা হলেও, এর পরের কর্মসূচি প্রকাশ করা হয়নি। বিএনপির একজন নেতা বলেন, তার নিরাপত্তার কারণে সেসব কর্মসূচি অল্প কিছু সময় আগে সংবাদ মাধ্যমকে জানানো হবে।

ওই নেতা আরো বলেন, তারেক রহমান হয়তো নির্বাচনি প্রচারে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রোগ্রামে সশরীরে উপস্থিত থাকবেন। বাকিগুলোতে লন্ডনের মতো অনলাইনে যুক্ত হবেন। তবে সেগুলো এখনো চূড়ান্ত নয়।

তার নিরাপত্তা ইস্যুটা তার স্বাধীন চলাফেরার ক্ষেত্রে বড় বাধা। ফলে তিনি সরাসরি মানুষের সাথে কম যোগাযোগ করতে পারবেন, বলেন তিনি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৭ বছর পর দেশে ফেরা তারেক রহমানকে

১. দলের মধ্যে কোন্দল ও অভ্যন্তরীণ সমস্যা দূর করতে হবে।

২. নির্বাচনী প্রচারে বিরোধীদের মোকাবেলা করতে হবে।

৩. তিনি যে পরিকল্পনার কথা বলছেন, তা বাস্তবায়নের দক্ষতা ও সততা প্রমাণ করতে হবে।

৪. আর তার দল সরকার গঠন করতে পারলে অর্থনীতি ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিভাবে স্বাভাবিক করকেন তার বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা করতে হবে।

‘‘তারেক রহমানকে এখন কাজ করে দেখাতে হবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আবেগপ্রবণ। তারা যেমন দ্রুত আবেগ প্রকাশ করে, আবার আবেগ চলেও যায়। তাই তারেক রহমানকে এখন কাজ করে দেখাতে হবে।

বিএনপি এরই মধ্যে নির্বাচনে তাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে। তারা তাদের সমমনাদের কিছু আসন ছেড়েও দিয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সরাসরি বিএনপিতে যোগ দিয়ে মনোনয়ন নিয়েছেন। অন্যদিকে জামায়াত তার শরিকদের নিয়ে কাজ করছে। তরুণদের দল এনসিপির সঙ্গে জামায়াতের নির্বাচনে আসন সমঝোতা হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। ফলে আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির এক সময়ের মিত্র জামায়াতই হচ্ছে বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ।

অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, বিএনপি যদি এখন নির্বাচনকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধে জাময়াতের ভূমিকাকে সামনে নিয়ে আসে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই জামায়াত বিএনপির শাসনামলে যা হয়েছে তা-ও সামনে নিয়ে আসবে। তখন অনেক কিছুই সামনে আসবে। ফলে এটা বিএনপির জন্য একটা বড় চাপ হবে।

তার কথা, এবার তরুণরা নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হবে। ফলে তারা অতীতমুখী নয়, ভবিষ্যতের পরিকল্পনা এবং সেটা বাস্তবায়নের সক্ষমতা দেখতে চায়। সেটা করতে না পারলে সাধারণ মানুষের আবেগ বেশি দিন থাকবে না।

তার মতে, তারেক রহমানের পাশে এখন কারা আছেন সেটাও দেখার বিষয়। ফলে, নির্বাচনের আগেই বিএনপির মধ্যে গুণগত পরিবর্তন এনে দেখাতে হবে। এটা তো ঠিক যে, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর চাঁদাবাজী, দখলের ঘটনা ঘটেছে। যারা এসব করেছে, তাদের বিরুদ্ধে এখন বিএনপি কী ব্যবস্থা নেয় তা-ও দেশের মানুষ দেখবে। শুধু মুখে বললে হবে না, করে দেখাতে হবে।

নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সামাল দেয়া এখন বড় চ্যালেঞ্জ হবে তারেক রহমানের জন্য। একই সঙ্গে নিরসন করতে হবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান মনে করেন, এটা মোকাবেলা করা তেমন কোনো কঠিন কাজ হবে না। কারণ, দেশে তারেক রহমান, বিদেশে তারেক রহমানের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। আর সার্বিক বিবেচনায় বিএনপির পাওয়ারে যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ফলে, বিদ্রোহীরা ততটা সক্রিয় হবে না। আর তারেক রহমান অন্য যারা আছেন, যারা মনোনয়ন পাননি, তাদের নিশ্চয়ই ভিন্নভাবে প্রোভাইড করার ব্যবস্থা করবেন।

নির্বাচন নিয়ে কেটেছে অনিশ্চয়তা?

তারেক রহমান দেশে ফিরে আসায় নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা অনেকটাই কেটে গেছে বলে মনে করছেন ‘ডেমোক্র্যাসি ডায়াস’-এর প্রধান ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন। তবে তিনি মনে করেন, তারেক রহমানের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। এই চ্যালেঞ্জ নির্বাচনের আগে এবং যদি জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে, তখনও থাকবে।

তিনি বলেন, বিএনপি যদি সরকার গঠন করতে পারে, তাহলে তাকে শুরুতেই অর্থনীতি নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। বিশেষ করে নির্বাচনের পরই রোজার মাসে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে চ্যাালেঞ্জের মুখে পড়বে। আর সার্বিক অর্থনীতি তো আছেই। আইন-শৃঙ্খলা তাদের জন্য এখন থেকেই চ্যালেঞ্জ। যেজন্য তারেক রহমানের কী পরিকল্পনা আছে তা কাজেই বোঝা যাবে।

ড. জাহেদ উর রহমান বলেন, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিএনপির দক্ষ লোকজন কতটা আছে, কী পরিকল্পনা আছে তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হবে। তবে নির্বাচনের আগে বিএনপি যে মুক্তিযুদ্ধকে সামনে নিয়ে এসেছে, জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করছে, এটা সঠিক পলিসি।

তার কথা, জামায়াত তাদের পক্ষে একটা হাইপ তুলেছিল। কিন্তু শহিদ ওসমান হাদি নিহত হওয়ার পর প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ও ছায়ানটে হামলা এবং আগুন জামায়াতকে চুপসে দিয়েছে। কারণ, এটা প্রমাণিত যে, জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের অন্তত দুইজন নেতা এই হামলা এবং আগুনে উসকানি দিয়েছে।

‘তারেক রহমান ঢাকায় ফিরে প্রথম বক্তৃতায় শান্তি, জাতীয় ঐক্য, সাম্য নিয়ে যে কথা বলেছেন, আমি মনে করি, তিনি তা ‘মিন’ করে বলেছেন। কিন্তু সেটা বাস্তবায়নের জন্য তার দল কতটা প্রস্তুত স্ইে প্রশ্ন আছে। তার দলের যারা আছেন, তাদের সেই দক্ষতা কতটা আছে।’

ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা যাতে বিশৃঙ্খলা না করে, প্রশাসনকে সহযোগিতা করে তা নিশ্চিত করতে হবে। দেশে স্থিতিশীলতা এবং ভালো পরিবেশ রক্ষায় বিএনপির দায়িত্ব আছে।

তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে যে উদ্বেগ, সেটা পুরোপুরি কাটবে না বলে মনে করেন ড. জাহেদ উর রহমান।

তিনি বলেছেন, সরকারও যে খুব বেশি কিছু করবে, তা আমি মনে করি না। ফলে, নির্বাচনে তারেক রহমান স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন না। তিনি হয়তো কিছু সমাবেশে যাবেন। আর অনলাইনে যুক্ত হবেন। তবে তিনি স্বাধীনভাবে সব জায়গায় যেতে পারলে বাড়তি সুবিধা পেতেন।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 992 বার