তরুণীকে বিএনপি নেতার ‘ধর্ষণ’, ৫ মাস পর ‘চেষ্টা মামলা’!
১১ জানু ২০২৩, ০৮:১৭ অপরাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেটের জকিগঞ্জে এক নারী দর্জি (টেইলার) গুরুতর অভিযোগ করেছেন ‘ধর্ষণকারী’ এক প্রভাবশালী বিএনপি নেতা ও থানার ওসির বিরুদ্ধে। ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা লিখিত অভিযোগটি নানা কৌশলে বিলম্ব করে ৫ মাস পর ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মামলা নেওয়া ও বাদিকে না জানিয়ে চার্জশিট দাখিল করে ধর্ষককে আড়ালের চেষ্টা করা হয় বলে ওই নারী অভিযোগ করেন।
জকিগঞ্জের কালিগঞ্জ বাজারের একটি টেইলার্সের মালিক ও স্থানীয় বাসিন্দা ওই নারী বুধবার (১১ জানুয়ারি) সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন।
তিনি পুলিশের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত টিম ঘটন করে সরেজমিন তদন্তপূর্বক ধর্ষণের ধারাসহ ধর্ষকের সহযোগিতাকারী ও ভিডিও চিত্র ধারণের অপরাধের ধারা সংযোজন করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিলের বাদি জানান। পাশাপাশি ঘটনার ধামাচাপা দেয়ায় জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট অপরাধী ও তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি করেন।
লিখিত বক্তব্যে ওই নারী উল্লেখ করেন, একজন পিতৃহীন নারী। মা ও এক ছোট ভাইকে নিয়ে তার সংসার। সংসারের হাল ধরতে কিশোর বয়সে টেইলারিং কাজ শুরু করেন। কালিগঞ্জ বাজারের চৌধুরী প্লাজার মালিক বিএনপি নেতা উপজেলার খলাদাপনিয়া গ্রামের মৃত বলই মিয়া চৌধুরীর ছেলে আব্দুল বাছিত চৌধুরী বাচ্চু কর্তৃক তিনি ধর্ষণের শিকার হন। গত বছরের ২ এপ্রিল ওই ঘটনায় তার সব ওলট-পালট করে দেয়। না পাচ্ছেন স্বামীর ঘর, না ন্যায় বিচার, না ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ২ এপ্রিল ধর্ষণের ঘটনার পর থানা পুলিশ নানা অজুহাতে বিলম্ব করে ৩ সেপ্টেম্বর ধর্ষণ প্রচেষ্ঠার অভিযোগে মামলা নেওয়া হয়।
বক্তব্যে ওই নারী অভিযোগ করেন, বিএনপি নেতা আব্দুল বাছিত চৌধুরী বাচ্চু বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে দোকানে এসে উত্যক্ত করতেন। মহিলা কর্মচারীদের চা-বিস্কুট আনার অজুহাতে বাহিরে পাঠিয়ে আমাকে কুপ্রস্তাব দিতেন, নানা প্রলোভনের কথা বলে ফোনে বিরক্ত করতেন। মোবাইল ফোনে তার নগ্ন কথাবার্তার রেকর্ড রয়েছে। গত ২ এপ্রিল তিনি দোকানে ঢুকে ধর্ষণ করেন। তার সাথে আব্দুল বাছিত নামে তার এক বন্ধু বাহির থেকে দোকানের শাটার লাগিয়ে দেন।
ঘটনাটি বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদকসহ স্থানীয় মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু জাফর মো. রায়হানকে তিনি জানান। জকিগঞ্জ থানায় গিয়ে ওসি মোশাররফ হোসেনের পায়ে হাতে ধরে কান্নাকাটি করেন। তার নির্দেশে এসআই মোহন রায় একটি লিখিত অভিযোগ লিখেন। এজাহারে ধর্ষণের কথা উল্লেখ থাকলেও ভিডিও চিত্রের কথা উল্লেখ ছিল না। প্রতিবাদ করলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হবে ও মোবাইল উদ্ধার করা হবে বলে জানান তিনি। সরেজমিন তদন্ত করে আলামতও জব্দ করেন এসআই। কিন্তু মামলা রেকর্ড না হওয় ৫ মে থানায় গেলে ওসি রহস্যজনক আচরণ করেন। তিনি কিসের মামলা উল্লেখ করে জানান- ওরা কোটিপতি, প্রভাবশালী বড়লোক, ওর সাথে তুমি পারবা না। তিনি খরছপাতি আদায় করে দেওয়ার কথা বলেন।
বক্তব্যে তরুণী বলেন, আজ না কাল বলে মামলা রুজুতে কালক্ষেপণ করা হয়। এ অবস্থায় বাচ্চু প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়িয়ে হুমকি ধমকি দিতে শুরু করে। এমনকি আমার ৫টি সেলাই মেশিন ও লক্ষাধিক টাকার মালামালসহ দোকান তালা লাগিয়ে দেয়। এ অবস্থায় সিলেটে নতুন পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন যোগদান করলে তার সাথে দেখা করার উদ্যোগ নেই। খবর পেয়ে ওসি ফোনে ২ সেপ্টেম্বর আমাকে থানায় নিয়ে মামলার পুর্বের এজাহারে সংশোধনী ও তিনটি সাদা কাগজ সাক্ষর নেন। প্রতিবাদ করলে ওসি রাগান্বিত হয়ে বললেন, তুমি ওসিকে বিশ্বাস করো না? তাহলে থানায় আসছো কেন? পরে জানতে পারি ৩ সেপ্টেম্বর তারিখ দেখিয়ে ধর্ষণ চেষ্ঠা মামলা রুজু করেন ওসি। যার নং-৩/১১৭। ধর্ষনের ঘটনার ৫ মাস পর পরিকল্পিতভাবে আলামত নষ্ট করা হয়েছে উল্লেখ করে নারী টেইলার জানান, তার মূল এজাহার পরিবর্তন, ধর্ষনের ঘটনা ও ভিডিও চিত্রের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ায় তিনি হতবাক হয়ে পড়েন। ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে তার সাথে ব্ল্যাকমেইলিং করা হয়েছে।
তিনি জানান, সর্বশেষ এসআই জসিম উদ্দিন তড়িগড়ি করে ধর্ষণ ও ভিডিও চিত্রের বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে গত ৩১ অক্টোবর না জানিয়ে চার্জশিট (নং-১৫৭) দাখিল করেন। চার্জশিটে বাচ্চুর সহযোগী বাছিতকেও আসামি করা হয়নি। বাছিতের কাছ থেকে আইও জসিম একটি রেস্টুরেন্টে বসে যে ঘুষ নেন তার প্রমাণও রয়েছে।
তার বিয়ের আক্দ হয়েছিল উল্লেখ করে বলেন, ঘটনার পর এখন আমার স্বামী আমাকে ঘরে তুলছেন না। ন্যায় বিচার না পেলে আত্মহত্যা ছাড়া আমার উপায় থাকবে না। তিনি দোকানের মালপত্র উদ্ধার, উচ্চ পর্যায়ের তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা ধর্ষণ ও ধর্ষণের ঘটনার ভিডিও চিত্র ধারণের অপরাধের ধারা সংযোজন করে আদালতে একটি সম্পূরক চার্জশিট দেওয়ার আবেদন করেন। পাশাপাশি ঘটনার ধামাচাপা দেয়ার মূলহোতা জকিগঞ্জ থানার ওসি মোশাররফ হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট অপরাধী ও তদন্তকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
অভিযোগের বিষয়ে আব্দুল বাছিত চৌধুরী বাচ্চু বলেন- এ নারী দুশ্চরিত্রা। আমার দোকানের ভাড়াটিয়া ছিলেন। দীর্ঘদিন দোকানের ভাড়া না দেওয়ায় অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ায় তাকে আমার দোকান ছাড়তে বলি। কিন্তু তিনি স্থানীয় একটি কুচক্রি মহলের উস্কানিতে জোরপূর্বক আমার দোকানে অবস্থান করতে থাকলে একপর্যায়ে তালা লাগিয়ে দেই। এরপরই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে এ মামলা করার চেষ্টা করেন।
আব্দুল বাছিত আরও বলেন- এই নারী মামলাবাজ। ইতোমধ্যে স্থানীয় অনেককে এভাবে হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার