এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন:
কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবীতে ভিপি নুরের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয় ২০১৯ সালে। ২০২৪ সালে কথিত ক্যাঙ্গারু কোর্টের এক ফরমানে কোটা পদ্ধতি পুন:বহাল করা হয়। কোটা সংস্কারের দাবীতে সাধারন ছাত্ররা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষনা করলেন। সরকার তাহাদের পোষা কুকুরদের দ্বারা সাধারন ছাত্রদের উপর বর্বর হামলা চালায়। পূর্বের ন্যায় হাতুড়ীলীগ দিয়ে আন্দোলন দমনের চেষ্টা চালায়। জনৈক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী ক্ষেপে গিয়ে বললেন, রাজাকারের নাতি পুতিরা কি চাকুরী পাওয়ার যোগ্য? তাহলে সাধারন ছাত্রদের বুঝতে বাকি রহিল না, আন্দোলন কারী সকল ছাত্রই তো রাজাকার। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কবি জসিম উদ্দিন হল থেকে জনৈক ছাত্র স্লোগান তুললেন “তুমি কে আমি কে রাজাকার-রাজাকার” “কে বলেছে-কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার”। স্লোগানে স্লোগানে মুখর বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। হ্যালমেট লীগ, প্রশাসন লীগ দ্বারা তাহাদের আন্দোলন ব্যর্থ করে দেওয়ার সকল অপচেষ্টা ব্যর্থ হল। ছাত্র জনতা, রাজনৈতিক দলসমূহ একত্রিত হয়ে রাজপথ দখলে নিল। সাঈদ, মুগ্ধ সহ হাজার হাজার শহীদ, আহত, পথচারীদের রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচার ফ্যাসিষ্ট হাসিনা পিছনের দরজা দিয়ে তাহার সাঙ্গপাঙ্গরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হল। ফ্যাসিষ্ট হাসিনার দুষর ডিবি হারুন, বিপ্লব, আছাদুজ্জামান, মনিরুল সহ গনহত্যায় নেতৃত্ব দিল। ৬০০ জন সেনাবাহিনীর হেফাজতে এসব কুখ্যাত অপরাধীরা আত্মগোপনে ছিল। সেনাবাহিনীর দেওয়া তথ্য মতে, কিন্তু তাহাদের কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। সাধারন ছাত্র জনতার আন্দোলনে যাহারা ষ্টিয়ারিং এর দায়িত্বে ছিল তাহারা কিন্তু সাধারন ছাত্র জনতাকে লাইফসাপোর্টে বা অন্ধকারে রেখে সরকার গঠনে ব্যতি ব্যস্ত হয়ে গেলেন। রাতের অন্ধকারে ৬ জন ছাত্র প্রতিনিধিকে নিয়ে একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হল। ৬ জনই ভাতের হোটেলে ডিবি হারুনের তত্বাবধানে টিভিতে আন্দোলন প্রত্যাহারের আহবান জানালেন। কিন্তু তাহাদের অনুপস্থিতিতে সাধারন ছাত্র জনতা আন্দোলন চালিয়ে যান।
* ১ম বৈষম্য: আহবায়কদের ৬ জনই ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র। অন্যান্য পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয়, কলেজ বা সাধারন জনতা কাহাকেও আহবায়ক কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি। ৬ জনের মধ্যে আবার ৩ জনকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়। অপর ৩ জন উপদেষ্টাদের সমমর্যাদায় প্রশাসনিক প্রটোকলে রাজনৈতিক দল গঠনে ব্যাতি ব্যস্ত। কে তাহাদেরকে এ দায়িত্ব দিয়েছে? পতিত ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সরকার যেভাবে সাধারন জনগনের টাকায় আয়েশী জীবন, নারী, গাড়ী ইত্যাদি নিয়ে ব্যাতি ব্যস্ত ছিলেন, সাধারন জনগনের ভাষ্যমতে এই ৬ মাসে অন্তবর্তী সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা গাড়ী বিলাশ, বাড়ী বিলাশ, নারী বিলাশ ইত্যাদি কার্যক্রমে অতিথ রেকর্ড ভংগ করিতেছেন। সাধারন ছাত্র জনতা তাহাদেরকে উপাধি দিয়েছেন বিনিময় যুদ্ধা। বিনিময় যুদ্ধাদের লাজ-লজ্জা বলতে কিছু থাকে না। কারন তাহারা লাটিয়াল। প্রকৃত যুদ্ধাহলে আন্দোলন সফল হওয়ার পর স্ব-স্ব ক্যাম্পাসে নিজের ও পরিবারের আশা আকাংখা পুরনে নিজস্ব কর্মস্থল তৈরী করে জাতির ভাগ্যন্নোয়নে সচেষ্ট হতেন। কিন্তু এসব নেতৃত্ব বায়বীয় উপায়ে অর্থ উপার্জনে সক্রিয়। যে কোন ব্যক্তি চরিত্রহীন হওয়ার পর উপযুক্ত লোকদের সম্মান দিতে জানেনা। যেমন: ২১শে পদকদারী ড: সলিমুল হক খানকে এভাবে দাওয়াত দিয়ে অপমানিত করার সাহস দেখাতেন না। ড: সলিমুল হক খান তো আর অপমানিত হওয়ারমত ব্যক্তি নন। ড: সলিমুল হক খান কতবড় জ্ঞানী তা কিন্তু এসব কচিকাচা উপদেষ্টাদের বুঝারই যোগ্যতা নেই। হযরত: আলী (রা:) বলেছেন, অশিক্ষিত, মুর্খ, অজ্ঞ, গুন্ডারা দেশ শাসন করিবে। আর জ্ঞানীরা দর্শকের ভূমিকায় থাকবে। ড: সলিমুল হক খানের ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে। চুরি, চামারী, বদলী বানিজ্য ইত্যাদি এসব সমন্বয়কদের প্রধান কাজ। পরিশেষে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পূর্ন ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশের অহংকার, জনাব ড: মোহাম্মদ ইউনুস স্যারকে বলব, এসব অযাচিত আবর্জনাদের কারনে নির্বাচন বিলম্বিত করে, আপনার ভাবমূর্তি নষ্ট না করে জনাব মো: সাহাব উদ্দিন সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান বিচারপতি এর দেখানো এবং শেখানো পথে অচিরেই নির্বাচন দিন। নতুবা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আপনার ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান। বাদা-ছাদারা জীবনে কিছু না পেয়ে আপনার নেতৃত্বে দুর্লভ ক্ষমতা পেয়ে গেছেন। সে তো চাইবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মরন কামড় দিতে।
* বৈষ্যম্যের ২য় ধাপ: প্রজাতন্ত্রের জমিদার হচ্ছেন আমলা। অতচ: রাষ্ট্রের সর্বোচ্ছ পদ হচ্ছে নাগরিক। নাগরিক না হলে সুইপার থেকে ক্যাবিনেট সেক্রেটারী, সংসদ সদস্য থেকে মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী কিছুই হতে পারতেন না। কারন জনগনের সংবিধান কর্তৃক তাহাদের ক্ষমতা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় নাই। তাহারা মৌলিক অধিকারের জন্য যাহা করিবে, তাহা সম্পূর্ন সঠিক এবং সত্য। সুতরাং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের উচিত ছিল যাহাদের ট্যাক্সের মাধ্যমে কর্মচারীদের বেতন ভাতা প্রদান করা হয়, তাহাদেরকে স্যার ডাকা। কর্মচারী তাহাদের নিকট চীর ঋনী। সাধারন জনগনের টাকায় কর্মচারীরা বিলাশী জীবন অতিবাহিত করেন। ধারনা ছিল অন্তবর্তীকালীন সরকার সাধারন জনগনকে রিয়েলাইজড করবেন। কিন্তু তাহারাই সমালোচনায় জর্জরিত।
* প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী দ্বারা সেবার ৩য় ধাপ: জেলা প্রশাসক, সম্পূর্ন জেলার জমিদার। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলার জমিদার। কারন জেলা প্রশাসক পদাদিকার বলে সকল কমিটির সভাপতি। সভাপতির মনোনীত ব্যক্তিগন সভাপতির দেওয়া নির্দিষ্ট সময় সভা হওয়ার কথা থাকলে ও তিনির বেড রেষ্ট ও অন্যান্য পারিবারিক কাজ শেষে সভার মনোনীত ব্যক্তিগনকে নিয়ে যখন ইচ্ছা তখন মিটিং করতে পারেন। প্রতিবাদ করার মত কমিটির কোন সদস্য সভায় দাড়িয়ে জেলা প্রশাসককে কৈফিয়ত তলব করিতে দেখা যায় না। কারন যদি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের বিরাগবাজন হয়ে জান। অনুরুপ উপজেলা পর্যায়ের সকল মিটিংয়ে নির্বাহী কর্মকর্তার ইচ্ছায় করে থাকেন। কমিটির সদস্যরা প্রতিবাদের চেয়ে তোষামতে ব্যতিব্যস্ত। আত্মীয় স্বজনকে বলতে শুনা যায়, উপজেলা পর্যায়ের এ কমিটির সদস্য, সে কমিটির সদস্য। সেটাই তাহার স্বার্থকতা। সুযোগ পেলে কিছু দালালী----। বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নিতি আইন শৃংখলার চরম অবনতীর কারনে জেলা-উপজেলায় ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়ার কথা। কিন্তু দলবেধে মিটিংয়ে উপস্থিত হয়ে তোষামোদের মাত্রা বাড়িয়ে দেন আমলাদের প্রতি। বিগত এক মাসে সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার থেকে ৪ জন অপহৃত হয়েছেন। কিন্তু জেলা প্রশাসককে নিয়ে মিটিংয়ে উপস্থিত সদস্যদের কাহারও এসব অপকর্মের প্রতিবাদী ভাষা শুনিনি।
* নির্যাতনের ৪র্থ ধাপ: নির্বাচন কর্মকর্তা, বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা যথাক্রমে: মঞ্জুরুল আলম ও নুরুল আলম সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার থানার খাসাড়ী পাড়া নিবাসী জাকির হোসেন তাহার যাবতীয় বৈধ কাগজপত্র নিয়ে উভয় কর্মচারীর নিকট স্বশরিরে উপস্থিত হলেন, যাহার এন আই ডি নাম্বার: ৭৩২৮৪৬৯০৭২। বাহিরে অপেক্ষমান প্রায় ২/৩ শত লোক। প্রান্তিক জনপদ থেকে এসেছেন জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করতে। বেশীর ভাগই প্রবাসে থাকেন। নতুন পাসপোর্ট নবায়ন করতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র লাগে। জাকির হোসেন কাতার প্রবাসী। তাহার ভিসা এবং পাসপোর্টের ম্যায়াদ মাত্র ১৫/২০ দিন। বিনয়ের সাথে তাহাদেরকে বললেন জাকির হোসেন বা রেমিট্যান্স যোদ্ধা। অতীতের ৩টি পুরাতন পাসপোর্ট, ম্যারেজ সার্টিফিকেট, নিকাহনামা, বার্থ সার্টিফিকেট সহ সকল কাগজ পত্রই দেখালেন। আবেদনের যদিও ৬/৭ দিন হয়ে গেছে, এখন ও ক্যাটাগরী হয় নাই। একজনের নাম্বার দিয়ে কমিশনার বললেন তাহাকে ফোন দেওয়ার জন্য।জাকির হোসেন বললেন আপনি ফোন করুন। উনার সামনে থেকেই ফোন করা হল। কমিশনার বললেন, এটা সামান্য ব্যাপার। হয়ে যাবে। পরের দিন জানতে চাইলেন, এন আই ডি কার্ড কি সংশোধন হয়েছে? রাগান্বিত হয়ে তাহারা উভয়েই বললেন এ ব্যাপারে তাহাদের কিছু করার নেই। সমাধান হল না। প্রকারান্তরে জানা যায়, মাধ্যমে গেলে অসম্ভব সম্ভব হয়। এটাই রেমিট্যান্স যুদ্ধার সম্মানীত হওয়ার উপহার। অফিসে বসাকালীন চা পানরত অবস্থায় ১৭/১৮ জনের স্বাক্ষাৎকার নেওয়া হল। তাহাদের মধ্যে মাত্র একজনের অ-কে হয়েছে। তাও আবার মহিলা।
এডভোকেট ফজলুর রহমান সাহেবের ভাষায় সুন্দরীদের তালিকা থেকে বিতর্কিত সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান নিয়োগ পেয়েছেন। উপদেষ্টাগন যাহাতে মানষিক রিফ্রেশম্যান্ট এর জন্য একজন থাকতেই পারেন। কিন্তু যখন রাজনীতিবীদদেরকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলেন সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান , ৫৩ বছর আপনারা কি করেছেন? মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রাজ্ঞ রাজনীতিবীদ, সু-শিক্ষায় শিক্ষিত, পারিবারিক ঐতিহ্য বিশাল, ন¤্র, ভদ্র ও স্বজ্জন রাজনীতিবীদ । তিনি রেজওয়ানা হাসানের মন্তব্যের ব্যাপারে সাংবাদিক প্রশ্ন করলে উত্তরে বললেন, এসব অর্বাচীনদের কথার জবাব দেওয়ার রুচি তাহার নেই।
লেখক: সভাপতি, সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), বিয়ানীবাজার, সিলেট। মোবাইল:০১৮১৯১৭৬২১৭।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আব্দুল খালিক
আইন-উপদেষ্টা: ব্যারিস্টার ফয়সাল দস্তগীর, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।
উপ-সম্পাদকঃ ফুজেল আহমদ
প্রকাশক কর্তৃক উত্তরা অফসেট প্রিন্টার্স কলেজ রোড, বিয়ানীবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও শরীফা বিবি হাউজ, মেওয়া থেকে প্রকাশিত।
বানিজ্যিক কার্যালয় :
উত্তর বাজার মেইন রোড বিয়ানীবাজার, সিলেট।
ই-মেইল: dailyajkersylhet24@gmail.com
মোবাইল: ০১৮১৯-৫৬৪৮৮১, ০১৭৩৮১১৬৫১২।
শাফিয়া শরীফা মিডিয়া বাড়ীর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান দৈনিক আজকের সিলেট, রেজি নং: সিল/১৫৩