ছয় স্তরের নিরাপত্তায় তারেক রহমান
২৫ ডিসে ২০২৫, ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ

স্টাফ রিপোর্টার:
ছয় স্তরের নিরাপত্তার চাদর দিয়ে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থায় থাকবেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। হযরত শাহজালাল রহ. আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তিনশ ফিট রোডে (৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে) সংবর্ধনা স্থল হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতাল। সবশেষ গুলশানের ফিরোজা ভবন। নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করতে বিমানবন্দরের ‘ইয়োলো জোন’ থেকে পুরো ১২ ঘণ্টা ছায়ার মতো তার চারপাশে ঘিরে থাকবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। সবশেষ ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তরে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো: সাজ্জাত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সংস্থার বিশেষ সমন্বয় সভায়ও নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। সেই সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে এভারকেয়ার হাসপাতাল, বিমানবন্দর এবং তিনশ’ ফিট এলাকায় যে কোন ধরনের ড্রোন উড্ডয়ন নিষিদ্ধ করা হয়।
সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) শফিকুল ইসলাম বলেন, তারেক রহমানের নিরাপত্তার বিষয়ে ডিএমপির পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ডিবি থেকে অন্তত দেড়শ থেকে দুইশ সাদা পোশাকধারী ফোর্স মোতায়েন থাকবে। বিমানবন্দরের ইয়োলো জোন থেকে শুরু করে তারেক রহমানের কনভয়ের সঙ্গে ডিবির সদস্যরা সাদা পোশাকে নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়া ৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়েতে সাদা পোশাকের সদস্যরা গোয়েন্দা হিসাবে মোতায়েন থাকবে। মোটকথা নিরাপত্তা নিচ্ছিদ্র করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রযুক্তি সেখানে ব্যবহার করা হবে।
একাধিক সূত্র বলছে, সিএসএফ (চেয়ারপারসন্স সিকিউরিটি ফোর্স), মিরপুর সেনানিবাসের এয়ার ডিফেন্স (এডি) আর্টিলারি ইউনিট, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৪৬ ব্রিগেড, সব গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিম, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি), বিজিবি’র একাধিক চৌকশ টিম, র্যাবের ইন্টিলিজেন্স উইং এবং ব্যাটালিয়ন আনসার গতকাল বিকাল থেকেই বিমানবন্দর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতাল এবং গুলশান তার বাসভবন ফিরোজা এলাকা বিশেষ নজরে রেখেছে। একাধিক সংস্থার সদস্যরা এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে ৩০০ ফুট এক্সপ্রেসওয়ে, এক্সপ্রেসওয়ে থেকে গুলশানের বাসা পর্যন্ত দফায় দফায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কিছু সংস্থার সদস্যরা এসব এলাকার সুউচ্চ ভবনের ছাদেও অবস্থান নিয়েছে।
মঞ্চের অবস্থান সাত বার পরিবর্তন করা হয়েছে: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমাবেশকে কেন্দ্র করে স্থাপন করা মঞ্চ এ পর্যন্ত ৭ বার পরিবর্তন করা হয়েছে। মঞ্চের উপরে ডায়াসের চারদিক বুলেটপ্রুফ কাঁচ স্থাপন করা হয়েছে। মঞ্চ প্রথম দফায় ৮ ফুট উঁচুতে স্থাপন করা হয়েছে। সেই উঁচু স্থান থেকে আবার ৭ ফুট উঁচু মঞ্চ স্থাপন করে সেখানে বক্তব্য দেয়ার জন্য ডায়াস স্থাপন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে সড়ক থেকে মূল মঞ্চের উচ্চতা ১৫ ফুট।
এই মঞ্চ স্থাপন করতে গিয়ে সাত বার তার স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে। মঞ্চ স্থাপন পরিবর্তন করার কারণ হিসাবে জানা গেছে, প্রতিবারই সম্ভাব্য স্নাইপার এ্যাটাকের বিষয়টি মাথায় রেখে পরিবর্তন করা হয়েছে। তিনশ’ ফিট রোডের দুই দিকের বেশ কয়েকটি উঁচু বাড়িকে স্নাইপার এ্যাটাকের এ্যাঙ্গেল থেকে দূরে রাখা হয়েছে। এ কারণে সাত বার মঞ্চ স্থাপন পরিবর্তন করা হয়েছে। মঞ্চ স্থাপন করতে গিয়ে প্রতিবারই স্নাইপার এ্যাটাকের মহড়া দেয়া হয়েছে। এছাড়া কেউ যদি গ্রেনেড নিক্ষেপ করে, সেটা কত দূরত্বে গিয়ে পড়বে, সেই দূরত্ব বিবেচনা করে মঞ্চ থেকে দর্শকদের বসার জায়গা করা হয়েছে।
এসব ব্যাপারে ডিবির প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুর ইসলাম বলেন, তারেক রহমানের নিরাপত্তা সংক্রান্তে কোন ধরনের শঙ্কা নেই। ডিএমপিসহ সবগুলো সংস্থা তাদের সর্বোচ্চটা দিবে।
একটি সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, অফিসিয়ালি অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে তারেক রহমানের ঘোষণা না করা হলেও তার নিরাপত্তা নিশ্চিতে একটি সংস্থা গোয়েন্দা তথ্য এবং আন অফিসিয়াল সাপোর্ট সরবরাহ করবে।
জানা গেছে, তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সিএসএফ সম্প্রতি পুনর্গঠন করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে সিএসএফের সদস্য সংখ্যাও। এর বাইরে দলীয়ভাবেও দশ হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত করা হচ্ছে। তারাও শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবে।
এদিকে তারেক রহমানের দেশে ফেরার জন্য নির্ধারিত লন্ডন-ঢাকা ফ্লাইটের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট থেকে দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। নিরাপত্তা ও ভিআইপি ব্যবস্থাপনার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিএনপি’র পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যেমন প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দলীয় ভাবেও নানা প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। বিমানবন্দরের রেড জোনে তারেক রহমানকে শুভেচ্ছা জানাতে যাবেন শুধুমাত্র দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। বিমানবন্দর এবং অভ্যর্থনাস্থলের জন্য আলাদা নিরাপত্তা পাশ দেওয়া হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
ড্রোন উড়ানো নিষেধ: রাজধানীর এভারকেয়ার হসপিটাল এবং সংলগ্ন এলাকা এবং তারেক রহমানের যাতায়াতের এলাকায় যে কোন প্রকার ড্রোন উড়ানো নিষিদ্ধ করেছে ডিএমপি। গতকাল ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি গণবিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে ডিএমপি অর্ডিন্যান্সের ২৮ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে ২৪ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাজধানীর এভারকেয়ার হসপিটাল এবং সংলগ্ন এলাকায় যে কোন প্রকার ড্রোন উড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের গমনাগমন এলাকায় (হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জসিমউদ্দিন রোড হয়ে এয়ারপোর্ট রোড থেকে কুড়িল ফ্লাইওভার হয়ে ৩৬ জুলাই এক্সপ্রেস হয়ে হয়ে এভারকেয়ার হসপিটাল হয়ে এয়ারপোর্ট টু বনানী সড়ক হয়ে কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ দিয়ে গুলশান-২ সার্কেল হয়ে গুলশান নর্থ এভিনিউ দিয়ে তার বাসভবন পর্যন্ত) বৃহস্পতিবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত যে কোন প্রকার ড্রোন উড়ানো নিষিদ্ধ করা হলো। অনুমোদনহীন ড্রোন উড়ানোর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার