কোথায় থাকবেন নতুন প্রধানমন্ত্রী
০৭ ডিসে ২০২৫, ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ

স্টাফ রিপোর্টার:
জাতীয় সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবনকে একীভূত করে দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে রূপ দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছিল সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। যদিও এই কমিটি শুরুতে বলেছিল, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা এবং হেয়ার রোডের ২৪ ও ২৫ নম্বর বাংলোবাড়িকে সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের জন্য বিবেচনা করা যেতে পারে। কিন্তু এই দুটি প্রস্তাবের মধ্যে এখনো কোনোটির বিষয়েই সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের বিষয়ে পরবর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নেবে এমন আলোচনা হচ্ছে বলে জানা গেছে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জানান, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
সর্বশেষ আওয়ামী লীগের শাসনামলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ছিল গণভবন। গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। সেদিন বিক্ষুব্ধ জনতা গণভবনে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এর এক মাস পর গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ করার সিদ্ধান্ত হয়। পিলখানা হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন-আয়নাঘর, ভোট ডাকাতিসহ শেখ হাসিনার ১৬ বছরের দুঃশাসনের সব গল্পই ঐতিহাসিক তথ্য আকারে জুলাই স্মৃতি জাদুঘরে উপস্থাপন করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। প্রসঙ্গত, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা।
সরকারের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, গত ৭ জুলাই নতুন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন নির্ধারণের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। নতুন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন কোথায় হবে, সে নিয়ে আলোচনায় শুরু হয়। শুরুতে যমুনা এবং হেয়ার রোডের কিছু বাংলো ব্যবহারের পরিকল্পনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সংসদ চত্বরের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবন একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঐ কমিটির সদস্যরা গত সেপ্টেম্বর মাসে ভবন দুইটি পরিদর্শনও করেন। কিন্তু নানামুখী জটিলতায় জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন নির্মাণের উদ্যোগ থেকে সরকার সরে এসেছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন তৈরি করা হলে লুই আই কানের নকশার লঙ্ঘন হবে। এরপর স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাড়ি দুটিকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন করা হলে নতুন সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার কোথায় থাকবেন, সেই প্রশ্ন ওঠে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন। এরপর ঐ মাস কিংবা মার্চ মাসে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবনের প্রয়োজন হবে। কিন্তু এই স্বল্প সময়ে সেই ব্যবস্থা করা কঠিন হবে। শুধু তা-ই নয়, নতুন বাড়িতে প্রধানমন্ত্রী থাকলেই শুধু হবে না, তার দপ্তরসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও নিরাপত্তাকর্মীরা কোথায় থাকবেন, সে প্রশ্নও আসে। তাদের জন্যও নতুন করে বাড়ি বানাতে হবে। এমন জায়গা কোথায় পাওয়া যাবে, সেটাও বড় প্রশ্ন।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর জন্য বাসভবন নির্মাণ করতে হলে এ সংক্রান্ত প্রকল্প গ্রহণ করতে হয়। এই প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বা সংসদ সচিবালয়কে। প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ থাকতে হবে। বরাদ্দ নিশ্চিত করবে অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য সরকারের নেওয়া মূল এডিপিতে (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) এ ধরনের কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। অন্যদিকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য নেওয়া এডিপিতেও এ ধরনের কোনো প্রকল্প পাওয়া যায়নি। আবার জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে নেওয়া ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এডিপিতেও এ সংক্রান্ত কোনো প্রকল্প নেই। ফলে আপাতত সংসদ ভবন এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর জন্য নতুন বাসভবন নির্মাণের কাজ শুরু হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আগামী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন কোথায় হবে, সেটি ঠিক করবে আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে আসা নতুন সরকার। বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা দেখভাল করছেন।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 985 বার