কবর থেকে লাশ তুলে এনে মাজার তৈরির চেষ্টা, প্রতিবাদে বিক্ষোভ
০৮ ফেব্রু ২০২৩, ১২:৩৪ পূর্বাহ্ণ
মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি:
মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে স্থানীয় কয়েজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কবর থেকে লাশ তুলে এনে লোকালয়ে মাজার তৈরির চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ নিয়ে এলাকায় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ পরিস্থিতিতে ওই স্থানে মাজার বানানো বন্ধ করার দাবিতে এবং এ ঘটনার প্রতিবাদে উপজেলার পশ্চিম কাজিরপাগলা গ্রামের সীতারামপুর এলাকায় মঙ্গলবার দুপুরে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় লোকজন।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, নানা ধরনের অপরাধ, মাদক সেবন ও অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সীতারামপুর ঘনবসতি এলাকায় মাজার করার পাঁয়তারা করছেন সিফাত খন্দকার ও তাঁর পরিবারের লোকজন। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন পদ্মা সেতু উত্তর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া সেখানে মাজার নির্মাণ বন্ধে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত আবেদন পাঠিয়েছেন।
এলাকাবাসী জানান, মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের মাওয়া পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় দেলা পাগলা নামের এক ব্যক্তির মাজারে বার্ষিক ওরস হতো। সেখানে অসামাজিক কার্যকলাপ ও মাদক সেবনের আখড়া ছিল। সেই দেলা পাগলার ছোট ভাই রাজা খন্দকার ১০ মাস আগে মারা যান। তাঁকে পদ্মা সেতুর কাছে মাওয়া চৌরাস্তাসংলগ্ন কুমারভোগ কবরস্থানে দাফন করা হয়। চার মাস আগে রাজা খন্দকারের ছেলে সিফাত খন্দকার কবরস্থান থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে বাড়ি বানানোর কথা বলে জমি কেনেন। সম্প্রতি ওই জমিতে আট ফুট উঁচু সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়।
গত রোববার বিকেলে স্থানীয় কিশোরেরা ক্রিকেট খেলতে যায়। সে সময় ক্রিকেটের বল দেয়াল ঘেরা বাড়ির ভেতরে চলে যায়। দেয়াল টপকে বল আনতে গিয়ে কিশোরেরা একটি নতুন কবর খোড়া অবস্থায় দেখতে পায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী ছুটে ঘটনাস্থলে আসে। তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, দেলা পাগলার ভাই মৃত রাজা খন্দকারের কবরের মাটি ও হাড়গোড় এনে সেখানে মাজার বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁর ছেলে সিফাত খন্দকার।
কুমারভোগ কবরস্থান কমিটির সাধারণ সম্পাদক অভি কাজী জানান, সপ্তাহখানেক আগে রাজা খন্দকারের লাশ কবর থেকে তোলার জন্য পরিবারের কিছু লোক এসেছিলেন। কিন্তু আমরা তাঁদের ইউএনও, ডিসি অথবা পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে আসতে বলি। গত রোববার সন্ধ্যার দিকে তাঁরা কবর থেকে রাজা মিয়ার লাশ তুলতে শুরু করেন। খবর পেয়ে কবরস্থানে গিয়ে তাঁদের কাছে লাশ তোলার প্রশাসনিক অনুমতি দেখতে চাই। কিন্তু তাঁরা তা দেখাতে পারেননি। পরে পদ্মা সেতু উত্তর থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। একপর্যায়ে অনুমতি না নিয়ে কবর খোঁড়া তাঁদের উচিত হয়নি বলে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান।
শিফাত খন্দকার বলেন, ‘সীতারামপুর এলাকায় কোনো প্রকার মাজার তোলা হবে না। আমার বাবার স্মৃতি সংরক্ষণ করতে কাজির পাগলায় আমাদের নতুন বাড়িতে বাবার কবরটি স্থানান্তর করতে চাইছি। বাবা মৃত্যুর আগে তাঁর কবর সংরক্ষণ করতে আমাদের অসিয়ত করে গেছেন। চাচা দেলু পাগলার মাজারের মতো কোনো কিছু করার ইচ্ছা আমাদের নেই।’
এ ব্যাপারে লৌহজংয়ের ইউএনও মো. আবদুল আউয়াল বলেন, ‘উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রিনা ইসলামের মাধ্যমে এলাকাবাসীর বিক্ষোভের বিষয়টি জানতে পারি। সেখানে মাজার হলে এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট হতে পারে বলে তাঁর উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে, সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার