ওসি স্বামীর বিরুদ্ধে দারোগা স্ত্রীর মামলা
০১ ফেব্রু ২০২৩, ০৩:৩৫ অপরাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার:
সম্পত্তির অর্ধকোটি টাকা ও বেতনের ৪৫ হাজার টাকা যৌতুক দাবিতে দারোগা স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে পুলিশ পরিদর্শক স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) ভুক্তভোগী দারোগা শাহাজাদীর ভাই শেখ রোকন যশোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলাটি দায়ের করেছেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ গোলাম কবির মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য জেলা মাহিলা বিষয়ক অধিদফতর কর্মকর্তাকে আদেশ দিয়েছেন।
অভিযুক্ত পুলিশ পরিদর্শক কামরুজ্জামান ঝিনাইদহে পিবিআইতে কর্মরত আছেন। তিনি খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার পদ্মবিলা গ্রামের মৃত সাত্তার ফকিরের ছেলে।
বাদী শেখ রোকন মামলায় বলেন, তার বোন শাহাজাদী আক্তারকে ২০০০ সালে মুসলিম শরিয়ত মোতাবেক অভিযুক্ত পুলিশ পরিদর্শক কামরুজ্জামানের সঙ্গে বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের দুইটি ছেলের জন্ম হয়। বাদীর বোন শাহাজাদী আক্তার বর্তমানে যশোর সদর আদালতে জিআরও পদে কর্মরত আছেন। অপরদিকে অভিযুক্ত কামরুজ্জামান ঝিনাইদহে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) পুলিশ পরিদর্শক পদে কর্মরত আছেন। স্বামী-স্ত্রী একই সঙ্গে সংসার করা সময়ে দারোগা শাহাজাদীর নামে খুলনায় ১২ শতক জমি কেনা হয়। ওই জমিটির বর্তমান মূল্য অর্ধকোটি টাকা।
কিছুদিন আগে ওই জমি এবং স্ত্রী শাহাজাদীর চাকরির বেতনের প্রতি মাসে ৪৫ হাজার যৌতুক হিসেবে দাবি করেন তার স্বামী কামরুজ্জামান। রাজি না হওয়ায় শাহাজাদীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। যে কারণে ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর শাহাজাদী তার স্বামীর বিরুদ্ধে যশোর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলাটি দায়েরের পর থেকে শাহাজাদীর উপর চরমভাবে ক্ষীপ্ত হন কামরুজ্জামান।
গত ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কামরুজ্জামান যশোরের স্টেডিয়ামপাড়ায় শাহাজাদীর ভাড়া বাসায় আসেন। এসময় তার বিরুদ্ধে কেন মামলা হয়েছে এবং পূর্বে দাবি করা যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। ওইদিন কামরুজ্জামান আরও বলেছেন আদালত থেকে মামলা প্রত্যাহার, খুলনার জমি বিক্রি করে টাকা এবং শাহাজাদীর বেতনের ৪৫ হাজার টাকা না দিলে তাকে খুন করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। কিন্তু ওই দাবি পূরণ করতে রাজি না হওয়ায় শাহাজাদীকে এলোপাতাড়িভাবে মারপিট শুরু করেন কামরুজ্জামান। শুধু তাই নয় শাহাজাদীর গলা টিপে শ্বাসরোধে হত্যাচেষ্টা করা হয়।
এসময় হাত দিয়ে ঠেকাতে গেলে ডাইনিং টেবিলের উপর থাকা ফল কাটা ছুরি দিয়ে শাহাজাদীকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা করেন। শাহাজাদী মাথা ও হাতে জখম হন। এরপর চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে কামরুজ্জামান দৌড়ে পালিয়ে চলে যান। পরে শাহাজাদীকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে ফিরে এসে থানায় এজাহার দাখিল করলে কর্তৃপক্ষ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন। এরপরে স্থানীয়ভাবে মিমাংসার চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে আদালতে এই মামলা করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী শাহাজাদী আক্তার বাগেরহাট সদর উপজেলার কলাবাড়িয়া গ্রামের মৃত মুক্তিযোদ্ধা আমির আলী শেখের মেয়ে।
অভিযুক্ত পুলিশ পরিদর্শক কামরুজ্জামান যৌতুক দাবিতে শাহাজাদীকে মারপিটের ঘটনা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, মামলায় প্রমাণ থাকলে আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদী পক্ষের আইনজীবী রুহিন বালুজ বলেন, এই ঘটনায় আগে কোতোয়ালি থানায় এহাজার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু থানা কর্তৃপক্ষ মামলা না নিয়ে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার