ঐতিহ্য ফেরাতে চায় ছাত্রলীগ
০৪ জানু ২০২৩, ০৬:৫৯ পূর্বাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৫তম জন্মদিন আজ। দীর্ঘ এই পথচলায় মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে সংগঠনটি। তবে সম্প্রতি ছাত্রলীগের নেতাদের নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সেই গৌরব ও ঐতিহ্য হারাচ্ছে এ সংগঠনটি। যদিও সেই ঐতিহ্য ফেরাতে বর্তমান কমিটি কাজ করবে বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক হলের অ্যাসেমব্লি হলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতিষ্ঠার সময়ে এ সংগঠনের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বাংলাদেশের বিভিন্ন অধিকার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এ সংগঠনের অবদান অনস্বীকার্য। এ ছাড়া স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও এ সংগঠনের অবদান কম নয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশে ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান সাবাব বলেন, ‘দেশের সব আন্দোলন, সংগ্রাম ও নানা সমস্যা সমাধানে এ সংগঠন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। সর্বশেষ মহামারি করোনায় এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জীবন বাজি রেখে মানুষের সেবা দিয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আমি মনে করি।’
তবে সাম্প্রতিক সময়ে সংগঠনের নেতৃবৃন্দের বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে হারাতে বসেছে ছাত্রলীগের ঐতিহ্য। বিগত এক দশকে ছাত্রলীগের বিভিন্ন সাংগঠনিক ইউনিটের কমিটি সময়মতো না দিতে পারা, যাচাই-বাছাই ছাড়া মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অছাত্র, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ও ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়িতদের নেতা বানানো, কেন্দ্রের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্বের কারণে সংগঠনের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে অসন্তোষ, ক্ষোভ ও হতাশা।
সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে সাইফুর রহমান সোহাগ-এসএম জাকির হোসাইন ছাত্রলীগের দায়িত্ব পান। এরপর সিন্ডিকেটের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে। তখন ২৯তম জাতীয় সম্মেলনের পর সংগঠনের হারানো ঐতিহ্য ফেরাতে সিলেকশনের মাধ্যমে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু শীর্ষ দুই পদে দায়িত্বে আসার পর চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে এক বছর পেরোতেই শোভন-রাব্বানীকে পদচ্যুত করা হয়। এরপর সংগঠনকে বিতর্কমুক্ত করতে আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে দায়িত্ব আনা হলে, তারা সংগঠনকে বিতর্কমুক্ত না করে করেছেন আরও বিতর্কিত। মেয়াদের শেষ দিকে এসে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অছাত্র, শিক্ষক নির্যাতনকারী, আজীবন বহিষ্কৃত—এমনকি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ও ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়িতদেরও নেতা বানাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।
তবে ছাত্রলীগের এসব বিতর্কিত বিষয়কে আমলে নিয়ে যোগ্য নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে ও সংগঠনের ইমেজ পুনরুদ্ধারে গঠনতন্ত্র না মেনে এবার কমিটি গঠন করা হয়েছে। ছাত্রলীগের এসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ড থেকে বের হয়ে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্তমান কমিটি সংগঠন পরিচালনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন বলেন, ‘সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সাফল্যের সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছে। আগামীতেও আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের ধারণায় রাজনৈতিকভাবে বিজয়ী করতে চাই। স্মার্ট ছাত্রলীগ ও স্মার্ট নেতৃত্বের জন্য আমরা জবাবদিহিমূলক নেতৃত্ব বাস্তবায়ন করতে চাই।’
সাধারণ সম্পাদক শেখ ইনান বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা অর্জনে ছাত্রলীগ অগ্রভাবে অবস্থান নিয়েছিল। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত রেখে শেখ হাসিনার ভিশন ও মিশন বাস্তবায়নে অগ্রগামী থাকবে। ছাত্রলীগের হারানো ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।’
বছরব্যাপী ছাত্রলীগের কর্মসূচি
৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বছরব্যাপী নানা কর্মসূচি নিয়েছে ছাত্রলীগ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন। বছরব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, কার্জন হলে কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন ও বিকেলে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ। ৬ জানুয়ারি দুপুর আড়াইটায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রা, ৫-৮ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, স্বেচ্ছায় রক্তদান ও সংগৃহীত রক্ত বিতরণ এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ। এ ছাড়া সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বছরব্যাপী যেসব কর্মসূচি পালন করবে তার মধ্যে রয়েছে—দেশের ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত অনাবাদি জমিতে শাকসবজি ও ফল চাষ, মাছ ও গৃহপালিত পশুপালন ইত্যাদি উদ্যোগ গ্রহণ। মতবিনিময়, কনসার্ট, স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ, আইডিয়া কনটেস্ট, সব সাংগঠনিক দলীয় কার্যালয়ে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা, স্মার্ট বাংলাদেশ অলিম্পিয়াড ইত্যাদি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ শেষে সাদ্দাম হোসাইন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মাধ্যমে আমরা শপথ গ্রহণ করতে চাই, আমরা একটা লড়াই করতে চাই। এই লড়াইয়ের শেষ আমরা দেখতে চাই। যারা জাতির পিতার হত্যাকারী, যারা দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছে, যারা ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে, যারা বাংলাদেশে দুর্নীতিকে রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করিয়েছে এবং সে দুর্নীতিবাজদের যারা পুনর্বাসন করতে চায়, আমরা তাদের বাংলার মাটি থেকে নিশ্চিহ্ন করেই ছাড়ব।’
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার