এখনই নয়, ন্যূনতম সংস্কার করেই নির্বাচন চাই: মির্জা ফখরুল

Daily Ajker Sylhet

দৈনিক আজকের সিলেট

২১ জানু ২০২৫, ০৫:৫৬ অপরাহ্ণ


এখনই নয়, ন্যূনতম সংস্কার করেই নির্বাচন চাই: মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার:
এখনই নির্বাচন নয়, ন্যূনতম সংস্কার করেই নির্বাচন চান বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।তিনি বলেন, দেশে ন্যূনতম সংস্কার কাজ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়াই হবে দেশের জন্য মঙ্গল। এখনই নির্বাচন চাচ্ছি না, ন্যূনতম সংস্কার শেষে নির্বাচন চাই। আমরা সবসময় নির্বাচনের কথা বলি, কারণ অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে নির্বাচিত সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বেশি।

মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জিয়া স্মৃতি পাঠাগার কর্তৃক ‘শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী ও জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের ১২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’ উপলক্ষে আয়োজিত গ্রন্থ আড্ডায় তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমারকে অনেকে ভুল বুঝে যে, আপনি এত নির্বাচন নির্বাচন করেন কেন? হ্যাঁ আমাকে (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর)… বিশেষ করে ছাত্ররা তো বলেই। এখানে নির্বাচন বলার কারণটা হচ্ছে একটাই… আমরা বিশ্বাস করি, আমি জানি এই বিষয় ভুল কিনা… যেকোনো নির্বাচিত সরকার কিন্তু অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে ভালো।আমার এক্সসেস থাকে, আমি যেতে পারি, কথা বলতে পারি..এখন আমার সেই জায়গাটা নেই।’

তিনি বলেন, ‘এখনই নির্বাচন করে ফেলতে হবে আমরা তা তো বলছি না। ন্যূনতম যে সংস্কারটা সেটা করে নিয়ে নির্বাচনটা করলে সমস্যাগুলো অনেকটা সমাধান হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংস্কারের প্রস্তাব আসতে শুরু করেছে। আমার বিশ্বাস যে, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা তিনি খুব শিগগিরই এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদেরকে ডাকবেন, একটা সমাধানের দিকে আসবেন, আলোচনা হবে ঐকমত্যের ভিত্তিকে আমরা একটা জায়গায় পৌঁছাব।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনটার কথা এজন্য তাড়াতাড়ি বলি যে, নির্বাচনটা হলে দেশের সমস্যাগুলো চলে যাবে। এখানে আপনার একটা নির্বাচিত সরকার সে একটা পিপলস ম্যান্ডেট নিয়ে বসবে… এরা (অন্তর্বর্তী সরকার) তো এখন বসতে পারিনি, ওদের মধ্যে সেই কনফিডেন্স তো নাই। পিপলের ভাষাটা তো বুঝতে হবে… সেটা আপনার একটা নির্বাচিত সরকার সবচেয়ে ভালো বুঝে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

সাম্প্রতিক সময়ে চলাচল বন্ধ করে আন্দোলন ও বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, কখনো ধৈর্য হারাবেন না, আশা হারাবেন না। কেন জানি না, আমাদের প্রত্যাশা অনেক। কিন্তু ধৈর্য একেবারেই কম। এইতো মাত্র কয়েকটা মাস হয়েছে। এরমধ্যেই আমরা পাগল হয়ে গেছি সব বিষয়ে। আমাদের সরকার অনেক ভুলত্রুটি করছে। ভুল তো করবেই, তারা তো আর সরকারে ছিল না; রাজনীতি করেনি, রাজনীতি বিষয়টা তারা জানে না, করেনি- ঠিক না? তাদের তো সে সময়টা দিতে হবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে তো কেউ একটা কথা বলারও সুযোগ পায়নি, সাহসও কেউ পায়নি। আর এখন যেহেতু একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে, সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ছে।

দেশের সব দল-মত, পেশার মানুষকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রতিদিন দাবি নিয়ে রাস্তায় নামছে মানুষ। সবাইকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। হঠকারি কোনো কিছু করা যাবে না। অতিবিপ্লবী চিন্তাভাবনা নিয়ে দেশে অস্থিরতা তৈরি করা যাবে না।

তিনি বলেন, যেভাবে চাই- রাষ্ট্র সেভাবে তৈরি হয়নি। সরকারের ভুলত্রুটি থাকবেই, দেশে অনেক জঞ্জাল আছে। এই অবস্থার পরিবর্তন এত দ্রুত হবে না। তবে যে সুযোগ পেয়েছি, তাতে আশা করি ভালো কিছু হবে। সংস্কারের যে প্রস্তাব এসেছে, এতে ভালো কিছু হবে। গণতান্ত্রিক কাঠামোতে গেলে সামনে এগিয়ে যেতে পারব।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এই মুহূর্তে সব পাল্টে দেব, সেটা হয় না। দেশের বর্তমান অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে ধৈর্য ধরতে হবে। প্রত্যাশা অনেক থাকলেও আমাদের ধৈর্য নেই। তাই এমন কিছু করব না, যাতে করে নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়।

সরকারের সমালোচনা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটাতে লাভটা কার? এটাতে এই দেশের, এই সমাজের, এই মানুষের কোনো লাভ হবে না। ধৈর্য ধরে সামনের দিকে যাই, অনেক ত্রুটি আছে, ত্রুটি তো তারা নিয়েই এসেছে, একেবারে ধ্বংসপ্রাপ্ত জঞ্জাল। আমার চিন্তায়ও ছিল না, এটা এত খারাপ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, এটার পরিবর্তন তো আপনার একদিনে হবে না, এত দ্রুত হবে না। ধৈর্য ধরেন, স্ট্রাকচার আমরা দাঁড় করি, একটা গণতান্ত্রিক স্ট্রাকচার দাঁড় হোক, সেই স্ট্রাকচার হলে নিশ্চয়ই আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মধ্যে ধৈর্য ব্যাপারটা ছিল। প্রথমেই তিনি যুদ্ধ শুরু করে দেননি। প্রথমে শুনেছেন, সমস্ত বিজ্ঞ বিজ্ঞ মানুষদের নিয়ে বসেছেন।

তিনি বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে সবসময়, হঠকারিতা করা যাবে না। অতিবিপ্লবী কোনো চিন্তা-ভাবনা নিয়ে সমাজে আরও অস্থিরতা, চরম একটা অবস্থা সৃষ্টি করা হয়তো কোনোভাবেই কাম্য হবে না। নৈরাজ্য সৃষ্টি করাটা বোধহয় ঠিক হবে না, এই কথাটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের মাহবুব উল্লাহ (অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ) ভাইয়েরা থিওরি পড়াতেন, তার মধ্যে একটা কথা ছিল রোমান্টিসিজম। রোমান্টিসিজম মানে শুধু প্রেম নয়, বিপ্লবের প্রতি প্রেম। অর্থাৎ এই মুহূর্তে আমি সব পাল্টে দিব, এই মুহূর্তে আমি সব দখল করব, অন্যায় রোধ করব- এটা হয় না। আপনাকে ধাপে ধাপে করতে হবে।

সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের এখানে যে অস্থিরতা চলছে, এই অবস্থা যদি নিয়ন্ত্রণ করতে চাই- আমাদের ধৈর্য ধরে পা ফেলতে হবে। এমন কিছু আমরা করব না, যাতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে আরও বিপদ ডেকে না আনি। এই বিষয়গুলো আমাদের মনে রাখতে হবে।

জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. জহির দিপ্তীর সঞ্চালনায় এ সময় আরও বক্তব্য দেন-অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, নরসিংদী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনজুরে এলাহী, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন প্রমুখ।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 986 বার