উদ্ধার হওয়া টাকার পরিমাণ নিয়ে থানা পুলিশ-ডিবির ঠেলাঠেলি
১০ মার্চ ২০২৩, ০৪:০৯ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর উত্তরায় ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের ছিনতাই হওয়া টাকার কিছু অংশ উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। টাকা উদ্ধারের পর ডিবি জানায়, ছিনতাই হওয়া টাকার মধ্যে প্রায় ৯ কোটি টাকা তারা উদ্ধার করেছে। তবে গণ্ডগোল দেখা দেয় উদ্ধার হওয়া টাকা গণনার পর। টাকা গণনার পর তুরাগ থানা জানায়, উদ্ধার হওয়া টাকার পরিমাণ ডিবি যা বলছে তা নয়, প্রকৃত সংখ্যা ৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
এরপরই উদ্ধার হওয়া টাকার পরিমাণ নিয়ে ঠেলাঠেলি শুরু হয় ডিবি ও ডিএমপির উত্তরা বিভাগ পুলিশের মধ্যে। এ বিষয়ে ডিবি বলছে, উদ্ধার হওয়া টাকার আসল পরিমাণ জানে উত্তরা বিভাগ পুলিশ। অন্যদিকে উত্তরা বিভাগ পুলিশ বলছে, টাকা যেহেতু ডিবি পুলিশ উদ্ধার করেছে, তাই তারাই জানে আসলে কত টাকা উদ্ধার হয়েছে। তবে এ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য কোনো পক্ষই দিচ্ছে না।
পুলিশ সূত্র জানায়, খোয়া যাওয়া চারটি ট্রাঙ্কের মধ্যে তিনটি ট্রাঙ্ক উদ্ধারের পর টাকা না গুনেই আনুমানিক ৯ কোটি উদ্ধারের কথা জানিয়ে দেয়ে ডিবি। পরে রাতে থানায় নিয়ে গণনার পর ট্রাঙ্কে টাকা মিলে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ বলেন, আমরা টাকা উদ্ধারের পরপরই ডিএমপির উত্তরা বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছি। আমরা টাকা উদ্ধার করেছি, কিন্তু গুনিনি। তাই টাকার সঠিক পরিমাণটা তারাই বলতে পারবেন।
এদিকে টাকার পরিমাণ নিয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) বদরুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, টাকা উদ্ধার করেছে ডিবি পুলিশ। তাই এ বিষয়ে তারাই বলতে পারবেন।
বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যায় ছিনতাই হওয়া সোয়া ১১ কোটি টাকার বেশিরভাগ উদ্ধারের ঘোষণা দিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) হারুন-অর-রশীদ বলেন, ঘটনার ১০ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা প্রায় ৯ কোটি টাকা উদ্ধার করেছি। বড় অংশই উদ্ধার করা হয়েছে। পরে রাতে টাকা বহনকারী প্রতিষ্ঠান মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের কর্মকর্তাদের সামনে উদ্ধার হওয়া তিনটি ট্রাঙ্ক খুলে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা পায় থানা পুলিশ।
এ বিষয়ে শুক্রবার (১০ মার্চ) দুপুরে মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, ছিনতাই হওয়া টাকার মধ্যে যে টাকাগুলো গতকাল ডিবি পুলিশ উদ্ধার করেছে সেই টাকা এখনো আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। উদ্ধার হওয়া টাকা এখনো থানায় রয়েছে। তবে পুলিশ গতকাল আমাদের সামনে টাকাগুলো গুনে ছিল। পুলিশের গণনা অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে উদ্ধার হওয়ার টাকার পরিমাণ ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তিন ট্রাঙ্কের একটি খালি ছিল। বাকি দুই ট্রাঙ্কে ছিল ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। টাকা বহনকারী প্রতিষ্ঠান মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের লোকজনই ট্রাঙ্কগুলো আনলক করেছেন, কারণ চাবিগুলো তাদের কাছেই ছিল।
পুলিশের কাছে তথ্য ছিল, সোয়া ১১ কোটি টাকাভর্তি চারটি ট্রাঙ্ক ছিনতাই হয়েছে। যেহেতু তিনটি ট্রাঙ্ক উদ্ধার হয়েছে, তাই বেশিরভাগ টাকা অর্থাৎ ধারণা করেই তাৎক্ষণিক প্রায় ৯ কোটি টাকা উদ্ধারের কথা জানান ডিবি প্রধান।
এদিকে ছিনতাইয়ের ঘটনায় তুরাগ থানায় অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে তুরাগ থানায় মামলাটি করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিএমপি উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) বদরুল হাসান, ব্যাংকের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় টাকা বহনকারী প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি মামলা করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সকালে রাজধানীর উত্তরা থেকে বেসরকারি ডাচ-বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী গাড়ি থেকে প্রায় সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। দিনের আলোতে রাস্তা থেকে নজিরবিহীন এ ছিনতাইয়ের ঘটনায় তাৎক্ষণিক মাঠপর্যায়ে অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে উত্তরা এলাকা থেকে ছিনতাই হওয়া সোয়া ১১ কোটি টাকার মধ্যে বেশিরভাগ টাকা উদ্ধারের কথা জানায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
উদ্ধার অভিযান শেষে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) হারুন-অর-রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাসসহ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত জনকে আটক করা হয়েছে। আটকদের মধ্যে টাকা পরিবহনে নিয়োজিত মানি প্ল্যান্ট লিংক সিকিউরিটিজ কোম্পানি লিমিটেডের দুজন পরিচালক রয়েছেন।
আটকদের জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি বাকি টাকা উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার