অপরিমেয় প্রত্যাশার ভার নিয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন

Daily Ajker Sylhet

দৈনিক আজকের সিলেট

২৫ ডিসে ২০২৫, ১২:০২ অপরাহ্ণ


অপরিমেয় প্রত্যাশার ভার নিয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন

স্টাফ রিপোর্টার:
তিন শত চৌদ্দ দিন পর নেতা আসছেন। বাংলাদেশ থেকে ৮ হাজার কিলোমিটার দূরে ছিলেন। বাধ্য করা হয়েছিল তাকে প্রিয় মাতৃভূমি ছাড়তে। দীর্ঘ বছর পর আবার ফিরছেন। রাজসিক প্রত্যাবর্তন হতে চলেছে তার। তার প্রতীক্ষায় অনন্ত প্রহর গুনেছে মানুষ। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে, নতুন আশার আলো ছড়িয়ে তিনি আসছেন নবজীবনের আশ্বাসে। আসছেন অপরিমেয় প্রত্যাশার ভার নিয়ে। লক্ষ-কোটি মানুষের উল্লাসের মধ্যে সূর্যোদয় হবে আজ। কারো চোখে আনন্দের অশ্রু, কারো মুখে হাসি, কারো হৃদয়তন্ত্রীতে ছড়িয়ে যাবে সব পাওয়ার এক অব্যক্ত বেদনার স্ফুরণ। জনতার বুক থেকে জগদ্দল পাথর নেমে যাবে।

চকিতে দেশের কোণে কোণে, দেশ জুড়ে বেজে উঠবে পরমানন্দের হিল্লোল। মুহুর্মুহু করতালি আর হর্ষধ্বনিতে ফেটে পড়বে বিপুল জনতা। বিমানবন্দর থেকে তিনশ ফিট পর্যন্ত প্রতিটি সড়ক ভরে উঠবে ভালোবাসার ফুলে, পুষ্প সৌরভে। বাতাসে ধ্বনিত হবে ‘স্বাগতম’- চতুর্দিকে উৎসব, চতুর্দিকে আনন্দ, চতুর্দিকে গণতন্ত্রের জয়গান। করতালি মুখরিত পথে ফিরে আসছেন বাংলাদেশের মুকুটবিহীন প্রসূর্ত রাজ; সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে নির্ভয় ভবিষ্যতের স্বপ্নদীপ্ত নিরঙ্কুশ প্রত্যাশার পথে। ১৭ বছরের অত্যাচারিত একটি জাতি হতাশা, দীর্ঘশ্বাস, বেদনা-রোদন ধারণ করেছিল তা মুছে দিয়ে গৌরবের ইতিহাস লিখতে আসছেন বাংলাদেশের মধ্যমণি, হৃদয় স্পন্দিত তারেক রহমান।

মানুষের প্রাণাধিক প্রিয় নেতা তারেক রহমানকে জনগণ থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। জনগণ থেকে দূরে থাকতে হয়েছিল। সশরীরে দূরে থাকলেও তার হৃদয় মন জুড়ে ছিল বাংলাদেশ, বাংলাদেশের জনগণ। ৮ হাজার কিলোমিটার দূরে থাকলেও জনগণ তাকে ক্ষণিকের জন্যে ভোলেনি। তাদের মানসপটে মুদ্রিত ছিলেন তিনি। জনগণকেও তিনি ভোলেননি ক্ষণকাল। বিশেষত তৃণমূলের জনগণ তার জন্য অন্তপ্রাণ। তিনিও তাদেরকে সর্বান্তকরণে ধারণ করেছেন অব্যয় অক্ষয় মননে মনীষায়। তারেক রহমানের রসায়ন তৃণমূলের ক্ষমতায়ন। চিকিৎসার জন্য তিনি গিয়েছিলেন বিলাতে। মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে যখনই সুস্থ হয়েছেন, প্রথম যে জনসভায় হাজির হয়েছিলেন তিনি ২০১৪ সালের ১৫ জুলাই, লন্ডনের টাওয়ার ব্রিজের একটি প্রশস্ত অডিটোরিয়ামে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশে প্রদত্ত বক্তব্যে সেদিন বাংলাদেশ গড়ার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা তুলে ধরেছিলেন নেতা। বলেছিলেন-জনগণের রায়ে বিএনপি আবার রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে কেমন বাংলাদেশ গড়বেন। প্রত্যেকটা সেক্টর ধরে ধরে তিনি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছিলেন। সেই জমায়েতে তিনি প্রথম ঘোষণা করেছিলেন-বিএনপি জনগণের রায়ে ক্ষমতায় গেলে সরকারি চাকরিতে কোটার হার ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনবেন। কী অভাবনীয় অন্তহীন দূরদৃষ্টি- একজন নেতার।

যে কোটাবিরোধী আন্দোলনের রেশ ধরে শেষাবধি ফ্যাসিবাদের পতন ঘটেছে সেই আন্দোলনের গোড়াপত্তন মূলত তারেক রহমানই করেছিলেন। ২০১৪ সালের ১৫ জুলাই যখন তিনি বলেছিলেন তখন কেউ চিন্তাই করেনি। ২০১৮ সালে প্রথম সূচিত হয়েছিল আন্দোলন, যার ঢেউ ভীষণ ঊর্মি-উত্তাল মুখরতার পথ পেরিয়ে ২০২৪ সমাপ্তি ঘটিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে তারেক রহমান ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংশপ্তক লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন। নিজ দেশের জনগণকে জাগিয়ে তুলেছেন। নিজ দলের মানুষকে উদ্বেলিত করেছেন। ঐন্দ্রজালিক হিরণ্ময় নেতৃত্বে রাজপথে টেনে এনেছেন সর্বময় মানুষকে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন। লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ করেছেন। তার কথায় বানের মতো, পতঙ্গের মতো ছুটে এসেছে মানুষ মুক্তির আকাঙ্ক্ষায়। প্রতিদিন তিনি কথা বলছেন। বিলাতের একটি বাসার আটপৌরে কক্ষের কাঠের চেয়ারে বসে বিপ্লবের বারুদ, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রণোদনা তৈরি করেছেন। তুমুল আন্দোলনের শিখণ্ডী হয়েছেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার কথার অগ্নিবাণ রুখতে হিংস্রতায় ডুবে যায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার রেজিম।

দেশের মানুষের কাছে যেন তার কথা পৌঁছাতে না পারে সেজন্য আওয়ামী আদালতের মাধ্যমে তার কণ্ঠ বাজেয়াপ্ত করা হয়।
২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি আদালতকে ব্যবহার করে তার কথা-বক্তব্য বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে যূথবদ্ধ মিথ্যাচার, শত শাখায় প্রোপাগান্ডা-অপপ্রচার, নিষ্কলুষ চরিত্রের ওপর কালিমা লেপনের কদর্যতা। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। থমকে জাননি। ভয় পাননি। আরও দুঃসাহসী হয়েছেন। সাহস জুগিয়েছেন বাংলাদেশের মানুষকে, জনগণকে। গোটা বাংলাদেশ অতন্দ্র কান পেতে থাকত তার তীব্র দীপ্রশানিত কণ্ঠ শোনার আশায়। মানুষকে মোহিত করার অমিত ঐন্দ্রজালিক শক্তির কাছে আওয়ামী শাসকচক্র পরাভূত হয়েছিল।

তিনিই ঘোষণা করেছিলেন-‘দফা এক দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’। এই দাবির পরে রক্তে বেজেছে দারুণ দামামা। তার আহ্বান নিশিডাকের শিস তোলা তীব্র বাঁশির মতো। প্রতিটি মানুষের রক্তবাহী শিরায় কাঁপন ধরিয়ে দেয়। মানুষ জ্বলে ওঠে বিপ্লবের আগুনে। ইতিহাস সাক্ষী ওয়ান-ইলেভেনের কুচক্রী প্রতিভূগণ এবং তৎপরবর্তী শেখ হাসিনা প্রাণবন্ত তারেক রহমানকে রূপকথার রাক্ষসের মতো বিনাশের আয়োজনে ব্যাপৃত ছিল। কিন্তু জনতার প্রাণভোমরা তারেক রহমানকে পরাস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।

তারেক রহমানের দল যখন ক্ষমতায়, তিনি তখনো সরকারের অংশ ছিলেন না। তিনি কখনোই ব্যক্তিগতভাবে সরকারের ছিলেন না। সেই সময়ে জনগণের নেতা তারেক রহমান তৃণমূলে ছুটে গিয়েছেন। উনসত্তর হাজার গ্রামে গঞ্জে জনপদে। তৃণমূলের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে নিবিড় নিবিষ্ট ঋদ্ধতায় পরম আপন জনের মতো কথা বলেছেন, হাত মিলিয়েছেন, মাইলের পর মাইল গ্রামের মেঠো পথমালা, ফসলের আল ধরে হেঁটেছেন। তাদের গল্প হাসি কান্না সাফল্যের ব্যর্থতার কথা শুনেছেন। নদী, ঝরনা, সমুদ্র, পাহাড়, অরণ্য, শুভ্র আকাশ, শস্যখেত, গ্রাম তারপর গ্রামের কৃষক-শ্রমিক, শিশু কোলে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রাম্যবধূ, আনন্দ-বেদনায় স্বতঃস্ফূর্ত স্বাগত জানিয়েছে।

তাদের কথাগুলো সুসংগঠিতভাবে সরকারের কাছে তুলে ধরেছেন। তৃণমূলের সঙ্গে সেই যে তার যাত্রা শুরু, তার যে নিবিড়-নিপুণ বন্ধন তার কারণে তাকে আর জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়নি। ধন্য পুরুষ তারেক রহমান, যার নামের ওপর পতাকার মতো দুলছে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ। তার নামের ওপর ঝরছে দেশের এ প্রান্ত থেকে সকল প্রান্ত ছেয়ে ভালোবাসার জয়ধ্বনি।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 988 বার